logo corona

Quarantine Diary ।। প্রিয়াঙ্কা

 

 

ভাবনারা সবই এই মুহূর্তে খুব এলোমেলো হয়ে আছে। গোছানো বড়ই কঠিন। আক্রান্তের/মৃত্যুর পরিসংখ্যান, কিছু মানুষের  অসচেতন আচরণ, শিয়রে প্রায় চলে আসা খাদ্য সংকট, অর্থনীতির ধস  কিংবা কোভিডকে ঘিরে চলতে থাকা রাজনীতি নিয়ে আমি আর কিছু বলবনা। বিশেষজ্ঞদের মতামত শুনছি, নিজেরাও আধা  বিশেষজ্ঞ হয়ে গেছি। যা অবস্থায় আছি, বিশেষজ্ঞ কে গিয়ে বলতে পারব, দাদা কিংবা দিদি, আপনি ভুল বলছেন। আসলে...এই এই এই।

তবে আমার অন্য কয়েকটা বিষয় মনে হচ্ছে। আসলে আমাদের মতো মানুষ যে শ্রেনীর অন্তর্ভুক্ত, তাঁদের বর্তমান  পরিস্থিতি বা সমস্যা অন্য শ্রেনীর মানুষের থেকে খানিকটা আলাদা। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আমাদের প্রধান সমস্যা গুলো হচ্ছে, আমরা অদূর ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। অর্থনৈতিক ধস আমাদের ওপরে কী মারাত্মক প্রভাব ফেলতে চলেছে সে নিয়ে আমরা সন্ত্রস্ত।  আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এই মুহূর্তে শুধুমাত্র ভয়াবহ পরিসংখ্যানের দ্বারাই ভীত শুধু নই আমরা, সামাজিক বিচ্ছিন্নতায় বিরক্ত, অধীর। আরেকটা অবশ্যম্ভাবী দুশ্চিন্তা আমাদের গ্রাস করে রেখেছে, সেটা হচ্ছে মৃত্যুচিন্তা।

   

আসলে চাওয়া ব্যাপারটা সময়ের নিরিখে বদলে বদলে যায়। একটা সময় এই আমরাই চাইতাম, নিজেদের সময়, দৌড় ঝাঁপের থেকে পরিত্রাণ। অফিসের চাপ নিতে না পারা ক্লান্ত শরীর বিশ্রাম চাইত। আমরা জানতাম আমরা সৃজনশীল কিন্তু সময়ের অভাবে আমরা আমাদের সৃজন কে লালন করতে পারছিনা। আমাদের সময় দরকার ছিল। এখন পেয়েছি। নিরবচ্ছিন্ন সময়। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে যেটাকে সময় বলে মনে হচ্ছে তা আসলে দুঃসময়। এবং এই দুঃসময়ের কোনো শেষ সীমা আমরা দেখতে পাচ্ছিনা। তাই ফেলে রাখা বইও পড়া হয়ে উঠছে না। অসমাপ্ত লেখাও শেষ হচ্ছে না। শুধু ওয়ার্ক ফ্রম হোম যেহেতু জীবিকার সঙ্গে সম্পর্কিত তাই সেখানে আমাদের কোনও শর্ত চলছে না। তাই করছি, বলা ভাল করতে হচ্ছে।

এ ক্ষেত্রে একটা ব্যাপার লক্ষ্য করার  মতো। নিজের সঙ্গে, নিজের সৃজনশীল সত্তার সঙ্গে এবং পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর পাশাপাশি আমরা একটা বিশাল অংশের সময় কাটিয়ে ফেলছি ডিজিট্যাল পৃথিবীতে। সেটা খবর হোক, কিংবা ফেসবুক স্ক্রলিং, রসিকতা, সাহিত্য, সেসব পড়া, তার প্রতিক্রিয়া, সিনেমা, ভার্চ্যুয়াল আলাপচারিতা ইত্যাদিতে। এমন কী, নিজেদের যত রাগ, অভিমান, ক্ষোভ ইত্যাদি সেসবও মনে প্রসেস হতে না হতেই উগরে দিচ্ছি ডিজিট্যালি। (আমি আমাদের শ্রেনীর কথাই বলছি, কারণ, ডিজিট্যাল পপুলেশন আমাদেরই সর্বাধিক) এই লকডাউনের পাশাপাশি  যদি এই মুহূর্তে যদি ডিজিট্যাল লক ডাউন হত, আমাদের জীবন থেকে আন্তর্জাল উঠে যেত, হয়তো প্রকৃত বিচ্ছিন্নতার কবলে তখন পড়তাম। এখনও আমরা বহির্বিশ্বের  কথা জানতে পারছি, অনুমান করতে পারছি কোথায় কী ঘটছে, একে অন্যের কাছে না থাকলেও পাশে থাকতে পারছি। বিশিষ্ট মনোবিদেরা আন্তর্জালে আমাদের মানসিক শক্তি দিয়ে চলেছেন। লিখতে পারছি, পড়তে পারছি, গান গেয়ে একটা মাধ্যমে শোনাতে পারছি যেখানে লোকসংখ্যা বাস্তবিক একটা অনুষ্ঠানের থেকে অনেক অনেক গুন বেশি। তাই হাত বাড়ালেই হয়তো স্পর্শের গন্ডিতে আমরা একাকী, কিন্তু একজন নয়, বহু মানুষের ভূমিকায় আমাদের মোবাইল ফোন কিংবা ইন্টারনেট রয়েছে।

সে অর্থে দেখতে গেলে, আমাদের জীবনে অনেক পরিবর্তন ঘটলেও অনেক কিছুর পরিবর্তন ঘটেওনি। কী কী পরিবর্তন ঘটেছে আমাদের জীবনে? যার জন্য আমাদের এত হাহাকার?   

এক, প্রতিনিয়ত একটা অজানা ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তার সঙ্গে বাস করতে হচ্ছে। এবং সেটা আদ্যন্ত অভ্যন্তরীণ।

দুই, আমাদের স্বাধীনতা খর্ব হয়েছে।

মূলতঃ, আমাদের এই দুই পরিবর্তনই আমাদের এই বিচ্ছিরি একটা অবস্থার সামনে দাঁড় করিয়েছে।

আমরা সাধারণত অনির্দেশ্য কোনও পরিস্থিতির জন্য কখনই নিজেকে প্রস্তুত করে রাখিনা। আর এ ধরণের বিশ্বব্যাপী একটা কঠিন পরিস্থিতির জন্যে তো নয় ই। সত্যি বলতে অবশ্যম্ভাবী কোনও পরিস্থিতি বা ঘটনার জন্যেই আমরা কখনও প্রস্তুত থাকিনা। নইলে, মৃত্যু কে তো জন্ম থেকেই রোজ সঙ্গে নিয়ে ঘুম থেকে উঠছি, খাচ্ছি, ঘুরছি, ফিরছি, প্রেম করছি, সিনেমা দেখছি । কিন্তু মৃত্যুর অস্তিত্ব অস্বীকৃতই থেকে যায় যতক্ষণ না আমরা বার্ধক্যে পৌঁছই। তাই মৃত্যুর প্রতি শুধুমাত্র ন্যুনতম সচেতনতা রাখা ছাড়া আমার মনে হয় এর বেশি পাত্তা দেওয়া অনর্থক।

আর যেটুকু পরিবর্তন জীবনে এসেছে, সেটা সাময়িক, হয়তো তার অন্য প্রান্ত এই মুহূর্তে দেখতে পাচ্ছিনা বলে সামনে অসীম অন্ধকার মনে হচ্ছে।  আর যদি বা মারাত্মক পরিবর্তন ঘটেও থাকে, তাহলেও সেটার সঙ্গে লড়াই করে  নেওয়ার ক্ষমতা আমাদের আছে, আমরা আমাদের মানসিক শক্তির পরীক্ষা নিইনা দেখে জানতেও পারিনা আমরা কতটা সক্ষম। কিছুদিন আগে একটা খুব ইন্টারেস্টিং আর্টিকল পড়ছিলাম, এই প্রসঙ্গে একটু বলতে চাই।  দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ায় এক ধরনের উপজাতি আছে, বাজাউ উপজাতি। যারা সামুদ্রিক যাযাবর। যাঁদের নিজেদের কোনও বাড়ি  ঘর নেই। প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরের মাঝে কয়েকটি উপসাগর রয়েছে, এই বাজাউ উপজাতি জলে জলেই ঘুরে বেড়ায়, জলের ওপর অস্থায়ী ঘর বেঁধে থাকে। নির্দিষ্ট কোনও ঠিকানা নেই এঁদের। এরা ‘সি জিপসি’। এঁদের মধ্যে  কেউ কেউ জন্ম থেকে মৃত্যু অব্দি নৌকোতেই কাটিয়ে দেন। জলের নীচে এরা জলের ওপরে আমরা যারা থাকি, তাঁদের মতোই সাবলীল। সমুদ্রের নীচে নেমে খাদ্য সংগ্রহ করা, শিশুদের জলের নীচে খেলা করা স্বাভাবিক ব্যাপার ওদের কাছে। এরা ডলফিনের মতোই প্রাকৃতিক ডুবুরি। গবেষকদের মতে তাঁদের জিনে থাকা কিছু বৈশিষ্ট্য থাকার দরুন এরা প্রাকৃতিক ডুবুরির মতন জলের নীচে ডুবে থাকতে পারে।  

এইজন্যে এই প্রসঙ্গ টানলাম, কারণ, হাজার খানেক বছর আগেও এই উপজাতি ছিলনা। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ একদল মানুষের মধ্যে নানারকম পরিবর্তন আসতে বাধ্য হয়েছিল, এবং পরবর্তীকালে একটা গোটা  উপজাতিই তৈরী হয়ে যায়। ও, উল্লেখ করা হয়নি এরা খুব আমুদে এবং সুখী হয়। ঘর বাড়ি, কোনও ধরণের  সম্পদের অধিকারী না হয়েও। আসলে মানুষের মধ্যে আঁকড়ে থাকার, ছেড়ে দেওয়ার, যেকোনো অবস্থায় সুখী থাকার ক্ষমতা রয়েছে। শুধু এই ক্ষমতার স্বীকৃতি নেই। হয়তো কালে কালে এই স্বীকৃতিও আমাদের নাগালে চলে আসবে।

আর এই গৃহবন্দীকালে কিংবা এই যে বিশ্বব্যাপী ভীতির সঙ্গে বসবাস করতে করতে আমরাও খুব কম সময়েই নিজেদের মানসিক বিবর্তন ঘটিয়ে ফেলতে পারি। তৈরী হয়ে যেতে  পারি পরবর্তী অনির্ধারিত একটা পরিস্থিতি  মোকাবেলা করার জন্য।

the entire universe is inside you’ ~ Rumi. আমরা বিশ্বায়ন ঘটিয়ে ফেলতে পারিনা?  

একক কবিতা সন্ধ্যা



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...