একক কবিতা সন্ধ্যা ।। সন্তু মুখোপাধ্যায়

santu

সন্তু মুখোপাধ্যায়-এর এক গুচ্ছ কবিতা

 

 

 

সিঁড়ি

সিঁড়িতে ধারাবাহিক পা ফেলতে হয়
কিন্তু মাঝে মাঝে –
সিঁড়ি পা-ফেলার সংখ্যা গোনে না।
সময়মতো সিঁড়িও
সুযোগ পাইয়ে দেয় স্বজনকে !

এভাবে যুগের পর যুগ
সিঁড়ি বিশ্বাস হারায়, ছলনা করে

আর আমরা সিঁড়ি ধরে গন্তব্যে পৌঁছাতে
বুড়োটে হয়ে পড়ি।

 

রাজা

স্রোতের বিপরীতে থাকলে –
হয়ত তুমি কয়েক যোজন পিছিয়ে যাবে
সম্পর্কের অবনতিতে তুমি হা-হুতাশ করো না
যা করছো তা তোমাকে তৃপ্ত করবেই।

কাঠঠোকরা প্রতিনিয়ত ঠুকতে ঠুকতে
যতটুকু আহরণ করে তা যথেষ্ট না হলেও
একটা সুখ ভোগ তাকে নতুনভাবে বাঁচতে শেখায়।

এই সময়টাতে তুমি নিজেকে অনুভব করো
ভেবে নাও তুমি প্রত্যন্ত কোনো দ্বীপের –
এক স্বতন্ত্র রাজা।

 

সাঁতার

আমরা প্রত্যেকেই সাঁতার কাটি
ডুব সাঁতার বা ফ্রি স্টাইলে গন্তব্যে পৌঁছাতে
কতজনকে অতিক্রম করি তার ইয়ত্তা নেই!

তুমি বাটারফ্লাই- এ
আরতি, মিহির কিম্বা মাসুদুর হয়ে উঠলে
আমার এগিয়ে যাওয়া ব্যর্থ হয়!

সাঁতার মানে শুধু অঙ্গ সঞ্চালন নয় –
মাঝে মাঝে প্রেমিকও হয়ে উঠতে হয়।

 

জীবন

অনেকটা রাস্তা হাঁটার পর
বিশ্রাম নিতে জানতে হয়।

মনের জন্য শরীরের জন্য
থামতে হবেই, থামা মানে –
সবসময় মৃত্যু নয়, একে জীবন বলে।

 

ক্যালেন্ডার

চৌকাঠে স্থবির সময়ের সাথে জানু পেতে আছে
সব সুখের নিশ্চিন্ত উল্লাসে একটা অপবাদ।
চোখ ঠিকরে বেরিয়ে পড়ছে –
মানচিত্রের নদী সমুদ্র জনপদ।

তুমি শুধু ক্যানভাসে রঙ চড়িয়ে
এঁকে ফেলছো নৈশ লোকের যাপন চিত্র, আর –
ভিজিয়ে নিচ্ছো নিজেকে অকাল বর্ষায়।

সুখ কুড়িয়ে ক্যালেন্ডার
ভরানো যাদের কাজ, তারাই -
মুখোশের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে।

 

শিরদাঁড়া

সব শরীরে শিরদাঁড়া থাকে
গুপ্ত যুগ থেকে আজ পর্যন্ত
অনেক শিরদাঁড়া বাঁকতে দেখেছি।

সোজা হয়ে দাঁড়ালে
আপনার সব অংশের সঙ্গে
শিরদাঁড়া সোজা রাখতে মেহনত করতে হয়।

জীবনে অনেক খেলাতে আপনি জিতলেও
ভেবে দেখুন -
আপনি ন্যুব্জ হয়ে পড়েননি তো !

 

পিরামিড জীবন

বৃষ্টি হলেই মন কেমন করে
ভিজে যায় যত পরমাণু সম্পর্ক!
অল্পতেই হেরে যাওয়া মানুষগুলো-
পিরামিড জীবন অতিবাহিত করে।

কয়েকটা বছর পেরিয়েও
অ্যালকোহলিক রাত কাটে।
এইভাবেই জবানবন্দী লিখে রাখা হয়
এ ফোর পৃষ্ঠায় লাল রঙে।

 

প্রাক্তন বলে কিছু ছিল না

ভালোবাসার বিপরীতে দ্বন্দ্ব থাকলে
কিছু কিছু সম্পর্ক আরও সুন্দর হয়,
ময়ূর একনাগাড়ে ভেজার পর
অঙ্গাঙ্গি হতে চায় উষ্ণ অভ্যর্থনায়।
এভাবে পরলোকের ব্যাখা দিতে পারলে–
দুঃখের সংজ্ঞা অজানিত থাকে।

পরিযায়ী মুখ তোমার পথ আঁকড়ালে
একবার, শুধু একবার ফিরে তাকাও
তোমার সেলফোনের গোপনে রাখা
কন্টাক্ট লিস্টে আর বলো –
প্রাক্তন বলে কিছু নেই!

 

ফিরবো না

হয়তো কিছুটা পিছুটান,
বিচ্ছেদ হয়তো!
চোখভেজা রুমালে লেগে ছিলে যতটুকু, তাও-
মিলিয়ে গেলো আমাজন হয়ে!

আজ ফিরে তাকানোর সময় নয়
হে প্রেম!ফিরবো না কোনোদিন-
এই প্রেমিক হয়ে।

 

মৌমাছি

ছড়িয়ে আছে মধু ও মোম
মৌমাছি পড়ে আছে ধূলায়।
কালরাতে কারা এসেছিল!
সারাদিন ওদের বিলাপ শুনতে শুনতে
যাকে মনে পড়ে,
সে আমার কেউ না-এই বলে
নিজেকে প্রবোধ দিই,তবু দেওয়াল
ভেঙে বেরিয়ে আসে ক্রোধ!

সেই ক্রোধের পাশে জড়ো হয় প্রতিবেশী!

মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...