মানবেন্দ্র পাত্র-এর এক গুচ্ছ কবিতা
প্রণয়
আঙুলের সান্দ্র একক লিখে রাখি অথবা মোহাতীত যা কিছু
আমাদের মতো ---- ধ্বনিত ; এই সব অব্যয় নিয়ে
কোনো একদিন দেখা হবে।
তার কাছে গিয়ে বলবো
একটি একটি করে উড়ে যাওয়া
প্রজাপতিদের কথা।
আমারই হাতে হাত রেখে
যাদু ও রূপের দেশ থেকে যারা এল
এমনই আহ্লাদিত তাদের প্রচলিত সুর
আহা! বাতাসের টুংটাং
গোপন আঘাত দিয়ো আমাকেও
একটি একটি করে সব প্রজাপতি উড়ে যাক
ইথারের দেশে---
ওই রাতের কাছে আমার আঙুল
তোমার আঙুলে মিশে আছে।
ও হৃদয়
ঐ যে মেঘের কাছে যাই
তোমার জন্য কেউ বসে আছে
মনে হয়।
সেতার বাজায়...
বাজুক সে আলোকপাত
তারের অভিলাষ বাজুক
এই যে গাছের হৃদয় থেকে টুপটাপ ফোঁটা
সে কি কারো নয়? ঝরে পড়ে বিস্তৃত
আমারই প্রার্থনায়
পাষাণের কাছে গেলে সেও যেন আসে
কাজলের টিপ পরে সেজে আছ বালিকা
মায়ার রূপটান----
কিশোরের ভ্রুক্ষেপহীন যতদূর
ভেসে যাই, ভেসে ভেসে যাই
তার কাছে গেলে
বেজে ওঠে আকাশ বাতাস।
ঘুম
মনে হলো এবার ঘুমাই
কতদিন পর
যাদুকরি আলোয় দেখা হবে
আমাদের জন্মের সাথে
এই জন্মের জন্য
তাকেও বলেছি আমি আমারই দেহজাত কথা
ফুটে আছে হলুদফুল
ফুটেছিল?
আমারই এত ক্ষয়!
কার দু'হাত ধরে প্রথাগত জানালার বাইরে
চলে যেতে চাই---
নিঝুম চাঁদের মায়া ও যাদুকরী এক
সেও তো
আয়নার কাছে গিয়ে
কেঁদেছে অনেক।
মনে হলো
দিকচিহ্নহীন আমি
কতকাল আকাশ দেখিনি।
দহন
রোম নগরী পুড়ে যাচ্ছে
আমাদের সব সত্যি
আমাদের সব মিথ্যা
আমাদের সমস্ত আস্বাদ
পুড়ে যাচ্ছি
আবার সেই তোমার জন্য
তোমার জন্য
আমার পুনঃজাগরণ হচ্ছে
ইউক্যালিপটাস গাছগুলোর ভেতর
সন্ধ্যা বিবশ হয়ে এল
নিজের প্রতি যেমন করে রেখেছি সুষম গূঢ়লিপি
নিজের মতো কিছু হোম
মনে হলো নিরোর জন্য আমি
প্রাসাদ থেকে ক্রমশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাই
আমার দেহাতীত রাত থেকে যাবে
তুমিও একদিন ঠিক
এই সত্যিটুকু জেনে
আমাকে দিয়ে দেবে সমস্ত চিহ্ণহীন অভিমান
হাওয়ার জানালা...
হে আমার আন্তরিক
কার সাথে ভাব
কার সাথে রাগ
কাকে দিই আয়ু
আমার দু'হাত
সে কোন আপন
আকুল নদীর
কুল খোঁজা ঢেউ।
রাতের আকাশ
যদি বা কাঁদায়
নাম ধরে ডাকে
মায়া কাননের
সব ক'টি ফুল
ফুটে উঠবার
খবর পেলাম
বাঁশিটির সুরে
কেঁদে ফেলে যে
কে হও তুমি?
কার সাথে ঘর
কার নাম নদী…
মধুমেহ
আমি নিশ্চিত জানি--- জ্বলন্ত আগুনের কাছে
যেতে ভয় করে আমার। এই ক্ষুধার কাছে যেতে চাই নি বলে --- পাখিদের গান ভালো লাগে। গাছের জন্য যে হৃদয় থাকা দরকার, তা আমার নেই বলে আমি আর কোনোদিন ফুল তুলিনি।
মরুভূমির জ্যোতি
সাগরের অতলান্ত
আমি দেখিনি।
শুধু একটা নিঝুম রাতের জন্য রেখে দিই
বুকের আওয়াজ ও গাঢ় হয়ে ওঠা কিছু ওম।
আমি নিশ্চিত জানি
কেউ একজন আমাকে নিয়ে বেঁচে থাকে
আমি তার জন্য কোনোদিনও
ফিরে যেতে চাইনি
দ্রাক্ষা বনে
আমার মধুমেহ রোগ নিয়ে আছি
এই অনেক...
প্রিয় ফুল, প্রিয় মুখ
অলীক এসে কথা বলে
আমি ফিতে বেঁধে দিই
সাজাই আলোর পূজা
স্তব...
আকাশে এখনও কিছু মাতোয়ারা মেয়ে
শান্ত আলোঘর থেকে বের হয়
আদিম বেদনা রাখা তাদের মুখে
অলৌকিক দৃশ্য জন্ম নেয় ; মহাপৃথিবীর তারা যেন সবাই ফুলের মতো
আমাদের কোলোনি থেকে
একদিন চলে যাবে
প্রিয়মুখ ও হত্যার কাছে।
অজানা ---
অনেক দৃশ্যের ভেতর
রঙিন পোশাক পরা
দোপাটিফুলের মতো ওদের
ফুটে ওঠা দেখি।
জন্ম
এই হত্যার কী বা দিন, কী বা রাত
ইচ্ছা অধীন বাঁশিটি বেজে ওঠে
জন্মের কাছে প্রতিটি প্রতিধ্বনির
বেজে ওঠা; ---ঐ দূরাগত হুইসেল
ডাক দেয় যদি আত্মীয় আত্মীয়।
বিভোর তুমি তরল ঢেলে দিও
ভাবের অচিন দেশের নাগরিক
ধ্রুপদ এবং দোতারা'টির প্রাণ
তার জন্য কতবার কেঁদেছিলে
যত্নে থাকা পেটের ভেতর ভ্রুণ?
তারার বয়স ---ডুব সাঁতার ও স্নান
কেউ কেউ কি হত্যা ভালোবাসো?
নতুন তুমি আমায় গ্রহন করো
অমোঘ আলাপ, কুড়িয়ে রাখা হৃদ…
মৃগশিরা ও অন্যান্য তারারা
লুটোপুটি দেওয়া বিকেল ফুরোবে
একদিন সন্ধ্যায়--- মেঘমালা হয়ে ডাকবে
ডাকিনিরা; আকাশ থেকে নামবে
শিশির কিংবা দেহজ-রজন!
অনন্তে জেগে আছে আমাদের হাতের শিরা
যার যার
বিগত জন্মলেখা
প্রকোষ্ঠে উড়ে গেল হঠাৎ সমুদ্রের দিকে।
এমন নিবিড় রাতে
ওপারে বসে আছে
আত্মার কলাকৌশল।
রঙিন মাছ
রোদ খেয়ে
জলে নেমে এল...
তুমিও উড়ে গেছ আমার কলিজা খেয়ে
ডাকিনী
চোখের তারায় নাচিয়ে দেখাচ্ছ আমারই
নীল উপমা।
তখনও সাদা ফুল বাগানে ফুটেছে।
হাঁসের ঠোঁটের মতো কালচে হলুদ
এক নক্ষত্র ----
আমাকে বলবে তার অপারগতা
অঞ্জলি দিয়েছে সে
উলঙ্গ বসে আছে এত যুগ-কাল।
আমাদেরই দেহজাত এমনই অলৌকিক আয়ু
নক্ষত্র পুড়বে এমনই বিধান মেনে
তবু, আবাদ-জমিনে যাই
এমনই শিশির পায়ে মেখে
আমি এক আশ্চর্য পেটের ভেতর
ভবিতব্য খুঁজতে খুঁজতে
কী দারুণ উঠেছি বেঁচে কিংবা মরে গেছি!
তবু তো অতল আয়ু
ফুটে থাকে মৃগ'নয়নে!
কেউ তো মৃগশিরা দেখায়
আমাকে দেখায়----- প্রলুব্ধ করে তার চোখের ভেতর থাকা তার কচিঘাস
আচঞ্চল নীল জল কিংবা আকাশে
অনন্তকাল আমি ভেসে আছি শুধু।
কোনোদিন যাবো না সমীপে
উলঙ্গ-ভাসমান
প্রতি সন্ধ্যায় তুমি
জানালা খুলবে
ও
তলপেটে বুলোবে আকাশ।
আমারই স্পর্শে তখন সাদা ফুল
নিশ্চিত, ফুটে আছে হেমন্ত ঋতূ।
বিকেল ফুরিয়ে গেল।
অনন্ত সময় জুড়ে কি আর করি?
কখনো ইচ্ছে হয় তোমাকে আমার করি,
আমাকে তোমার!
কেউ
একা
নিঃস্ব
ঘুমের ভেতর একদিন মরে যেতে চায়…
ডাহুক
১.
ডাহুকের গায়ের রঙে
চরাচর,
এনেছে তাকে।
তার রূপবান আলো
শ্রাবণমাসে এসে ঠিক
ডিম দেবে সাদা...
দুধের মতো, তাকে দেখা যাবে
অভিনব ; একান্ত হৃদয় যেন কেড়ে নেয়
অপরূপ ডাহুক-ডাহুকি…
কেন এই চরাচর অন্ধ হল না!
২.
ডুবে যাও
আরও, আরও ----
পানকৌড়ি তোমারও চোখের কাছে
হাত পেতে আছে জল
ফসলের বিনম্র ক্ষুধা ;
তবুও তরল তুমি
জিজ্ঞাসার কাছে
কতটা পাবে তার আত্মাতীত তল?
৩.
খুলে রাখো অন্ধতা…
চোখের মনির ভেতর আছে পাখিদের ভরা সংসার।
তাদের আছে অনুরূপা সমুদ্রের নীল
পলল জমিন ভরে আছে
৪.
এসো হে শ্রাবণ মাস
সাইকো থেরাপি!