একক কবিতা সন্ধ্যা ।। পাপড়ি গুহ নিয়োগী

papri

পাপড়ি গুহ নিয়োগী এর এক গুচ্ছ কবিতা

 

ঘা

আমাদের যারা ঘর থেকে বের করে দিয়েছিলো
আজ তারা দরজায় কড়া নেড়ে বলে
পাখি নিয়ে এসেছি, ওড়াবে

 মা বলে সাবধান, শূন্য খাঁচা ওরা ভালবাসে না
কিন্তু জানালা বারান্দা ছাড়া ঘর...কতদিন

 তারপর থেকেই আমি মা আর আমাদের মত লাখো ঘর
খই নাড়ি। খই ভাজি। খই বেচি। খই আঁকি রাস্তায় রাস্তায়

 দাদারা বলে বাপরে, কৃষক বাঁচাও। শ্রমিক বাঁচাও  
হলো কি ভিখিরিদের 
দেশে তো আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালিত হয়ই

 এখন আমাদের ছেলে মেয়েরা ইংরাজি মাধ্যমে পড়ে
ভিনরাজ্যে যায় কাজ করতে। পপকর্ন খায় মদ দিয়ে
যৌন সিনেমার সাথে আত্মহত্যার খসড়া বানায়

 ওরা ভোট চায় কফিনের দরজায় দরজায়  

 সভ্য দেশে
টানা হেঁটে ভূগোল বদলে দেওয়া যায় না 
আমরা ক্লান্ত খই গুনতে গুনতে

 মা হেসে রাষ্ট্রের মুখে থুতু দেয়
আবার হাসে। খই ছিটায়। হাসে
হাসতেই থাকে...

 

আপনারা কারা

ঠিকাদারের শহরে
আমরা ভাঙা টিনের বাড়িতে থাকি
আগাছায় ঢেকে গেছে চারপাশ
এখানে সন্ধ্যা নামে ঝিঁঝিঁ পোকাদের রেওয়াজে
আপনাদের চেনার কথা না আমাদের

এডুকেশন লোন। বাবার ক্যান্সার। মায়ের ডিমেনশিয়া
আমাদের কোমর পড়ে গেছে বহু আগেই
বৃষ্টিতে ভীষণ ভয়। টিন দিয়ে জল পড়ে
বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট, কবিতার বই পেতে দেই
আপনারা কোনদিন চিনতে চান নি আমাদের

অভাবের সংসারে যেটুকু তেল কিনি
সেটা দিয়ে রান্না করতেই চলে যায়

বিগবাজার কোন দিন ডাকে না সাহিত্যের বাণিজ্যে উৎসবে
বরং দীর্ঘ একটি হাত গুপ্ত হত্যা করে প্রতি মুহূর্ত
শেয়াল নেতৃত্বে ঘরে ঘরে বুদ্ধিজীবিরা কাঁঠি কেন্দ্র খুলেছে
দুর্নীতির আয়নায় জন্মবৃত্তান্ত ডানা ঝাপটায়
আপনাদের চেনার কথা না আমাদের

প্রতিবার রক্তদান শিবিরে জেগে উঠি
কারা যেন আবার ঘুম পারিয়ে দেয়
এই কেনা বেচার বাজারে বরাবর পিছিয়ে আমরা

ধর্ম পল্লী কোন দিন প্রিয় ছিল না
আমরা এক থালায় ভাত খেয়ে বড় হয়েছি

জনগননের ভগবান নরবলি দেয় চাকরি
প্রতিটি জন্ম হয় একেকটি কালো বেড়াল

হাঁটুজলে পা ডুবিয়ে
বেদীতে রিপু বলি দেয় মানুষজন্ম

কাঁটা, গলা থেকে নামানোর
সহজ উপায় ভাতের দলা খাওয়া

 

ভাতের গপ্পো–৩

ভাত আঁকতে না পেরে
আমরা আত্মহত্যার রাস্তা বেছে নেই

কী আশ্চর্য
ভোট আসে ডিম্ভাতের মালা পরে  
গান স্যালুট দেয় দ্রৌপদীরা

রাষ্ট্র
তুমি বরং মৃত্যুর দেবতা হও

# ভাতের গপ্পো–১০


মোটা চাল আঁকতে আঁকতে
সরু চাল আঁকতে শিখেছি

তবুও টিন সরিয়ে ছাঁদ আঁকতে পারিনি

ছেলেদের আইবুড়ো ভাত দেবার সময় হয়ে এলো
ভাতের অভাব হবে না তো?

 

অবান্তর

কমেডিয়ান চরিত্রে অভিনয় 
তেমন দাম নেই
নায়ক। নায়িকা। ভিলেন থাকে গল্প জুড়ে

কারণ আমরা তো জোকার

 

দেশদ্রোহীর ডায়েরি–৫

রাষ্ট্র এখন মর্গের ইঁদুর-বাহিনী
মৃতদেহর চোখ নাক স্তন খুবলে
যৌনাঙ্গ পাহারা দেয়

ওয়াচ টাওয়ার থেকে ভ্রমণপিপাসু শেয়াল
মৃতদেহে সেক্সি গন্ধ পায়

চাঁদ আর নক্ষত্র
এই গল্পে প্যান্ট ভরে পেচ্ছাপ করে

 

জবাতন্ত্র

আমি দেখেছি একটি শবদেহ
দীর্ঘ সময় পুড়তে

ওরা অন্ডকোষের ঘা চেটে
বগল চেটে 
হাতল তৈরী করে

জবাফুলের পরিবার বসে আছে 
গণতন্ত্রের মুখোশ পরে

মহামারীর ভেতর  
ওরা প্রত্যেকেই একেকটি চেয়ার

 

ডর

বার্ন ওয়ার্ড জুয়া খেলে
আগুন হাসে

যদি চিৎকার করে বলি
জ্বলন্ত অবস্থায় ভীষণ কষ্ট

ফুটা থুথু গিলে জন্মের রহস্য খোঁজে
নয় মাসের লজ্জা রক্তের সাথে জাবর কাটে

নামের প্লাস্টিক সার্জারি করে রাষ্ট্র
অস্তিত্ব ঢেঁকুর তোলে

তবু বলতে পারিনি
ছেলেবেলায় বুকে হাত দিয়েছিল কে

বরং দিনরাত শুনতে হয়েছে
‘তুই পরিবারের নাম নষ্ট করবি’

কেন বলতো ওরা
‘জন্মের সময় মেরে ফেললে ভাল হত’

গর্ভে থাকা বাচ্চাকে খেতে দেয়নি
বারবার দরজা দেখিয়ে দিয়েছে

আজও বুঝতে পারি না কেন বলত
‘মেয়া মানুষের আবার এত খিদা কেন’

আলাদা করতে পারি না
রাস্তার নেড়ি কুত্তা থেকে

রোবটের পৃথিবীতে ক্রীতদাস শব্দটা আজও প্রাসঙ্গিক

বলতে চেয়েছি বারবার
গ্রাম ছাড়তে কারা বাধ্য করেছিল

আজ ওরা রাষ্ট্রের গু খেতে খেতে
চাইলে বাঘের দুধ সংগ্রহ করতে পারে
নগ্ন
অথচ
ফুলে ফুলে ভরে ওঠে ওদের ড্রয়িং রুম

কুকুরের নামের তালিকা প্রকাশ পায় যেদিন
গাড়ি দুর্ঘটনা হয়নি

চাকরি
চারলাখ না দিতে পারা
সত্যি কি অপরাধ…

জন্ম ভিটায় মায়ের চোখের জল
কি
অদ্ভুত
মানুষের জঙ্গলে বাঘের সংখ্যা

চুপ…

শুধু বারবার জানতে চেয়েছি
দরজা
জুতা
কলম
কাগজ
ওরা কিছু বলতে পারেনি
ইদানিং আশ্চর্য শূন্যতা নরকের ক্যানভাসে

এদিকে দ্যাখো যুবকশীত নদীর ঠোঁটে ঝুলে
চুমুর ডানায় চাঁদ
শুনছ?
ইঁদুর মারা কল শুশ্রূষা বিলি করছে

খিদে পায় আবার কান্নাও পায়
সময় কি ক্ষত শুকিয়ে দেয়?

ধুর, গল্প বলার সময় কথা বলবে না তো

নেক্রপলিস ২


শ্যাওলায় ঢাকা পাথর আপনি
এই নেক্রপলিসে

ভোটারকে ব্যাকরণ শিখিয়ে
একাডেমিকে বানিয়ে তোলেন ছাত্র ইউনিয়ন

ডোরাকাটা মাছ
গোপনাঙ্গ হাতড়ে মুঠোভর্তি সৌন্দর্য খোঁজে

বেঁচে থাকার অভ্যেসটুকুও জলসুখ চায়
শব্দতরঙ্গ চরমে ওঠে নামে

আপনি দূরে লোভ ছিটিয়ে রাখেন
তারপর জনগনের দল নেড়ি কুত্তা হয়ে যায়

মৃত্যু পর্যন্ত বিষাক্ত কাঁটার লালা, ভয়ঙ্কর
আপনি মর্গে দাঁড়িয়েও ক্যামোফ্লেজ ধারণে ওস্তাদ

খেদ

মৃত্যু 
   ঠিক আছে

কিন্তু মৃতদেহ !

মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...