পলাশ মজুমদার-এর এক গুচ্ছ কবিতা
একটি নরম কবিতা
আজকাল লিখতে বসলে ভীষণ
শান্ত হয়ে যাই। সন্ন্যাসী উত্তরীয়
চেপে বসে সর্পিল দেহ পৃথিবীতে।
সৃষ্টির উত্তেজনা নেই। দেখানদারি
নেই। খবরদারির খ-টুকু নেই।
কোমল পেলবতায় তৈরি করি এক
একটা আদিগন্ত নৌকা বিলাস। যত্ন
করে পালের গায়ে গায়ে বাদামি খিদে
আঁকি।
নরম শব্দ'রা আরও বেশি নরম হয়ে ওঠে আজকাল। খুলে রাখি জানালা,
দরজা, ঘুলঘুলি বেয়ে বেড়ে ওঠা সব
লতানো পাহাড়। সিঁড়ি দিয়ে যতটা
ব্যস্ততায় নামি, উঠতে গিয়ে ততগুলো
নিঃশ্বাস রেখে আসি প্রতিটি সিঁড়ির
বুকে, পাঁজরে। আসলে নামি না, নামতে
নামতে উঠে পড়ি স্বর্গ বিষাদের অন্তিম
চূড়ায়।
লিখতে গিয়ে কাটাকুটি বড় কম হয়
আজকাল। ছাপোষা কলমে নিগূঢ়
তপস্যার প্রভাতফেরি চলে। জলপথে
ঢেউয়ের আঁচ পেলে স্থল কিংবা
আকাশ পথে পাড়ি জমাই।
শান্তি চুক্তির অছিলায় সাদা বকের মতন উড়িয়ে
দেই জ্যোতিচিহ্নের যাবতীয় নির্ভরতা।
আজকাল ঠান্ডা মাথায় গলা টিপে হত্যা
করি যতেক আহত বিস্ময়। মরণোত্তর
কে ঘাঁটবে এইসব অপত্য জঞ্জাল?
অসীম নির্লিপ্ততায় মৃত্যুর হৃদয়কেও
রক্তাক্ত করতে পারি আজকাল।
স্মৃতি আলেখ্য
অবতারণা :
ল্যাংটো শৈশব ছুঁয়ে ছুঁয়ে বেপরোয়া সন্ধিকাল
পান্তাভাতে গোটা লংকার হাতেখড়ি দিন
ধূলো, ঝুল - স্নানঘরে দ্বিপ্রাহরিক নিঃসঙ্গতা
ঘটনাতীত :
গর্ভবতী কাঠঠোকরা দুয়ারে রোজ ঠক্ ঠক্ .......
মিছিলের শির ছুঁয়ে ছুঁয়ে গন্ধর্মদন
আমের কষ লাগা ঠোঁটে বাতাসী'র বিলম্বিত চুম্বন
স্কুলফিরতি মগজে মাধবী'র নীল পাড় নীল ছবি
এ্যাসবেসটস্ চুঁইয়ে পড়া বৃষ্টিফোঁটা উত্তাপহীনা'র
গ্রহীতাহীন কবজকুন্ডল নিশ্চেষ্ট বর্ণহীন
ক্যান্টিনের ফ্ল্যাশব্যাকে ভাঙচুর , ক্ষত , মুহূর্মুহূ ধোঁয়া
টগর-কবুতর দাস বাড়ির ফুঁটো চালে প্রত্যাখ্যান ছোঁড়ে
বড়বাবু'র জঠরে শান্তিচুক্তি , অনাদায়ী খাজনা মকুব
জীমূত গর্জনে নির্ভয় নিরঙ্কুশ কঙ্কাল স্মৃতি
আণুবিক্ষনীক শান্ত্বনা'র কপাটে হিরে উপঢৌকন -
স্মৃতির গায়ে থোকা থোকা মাংসে পোড়া গন্ধ নেই
যা আছে - জলজ ভালোবাসা
শুদ্ধিপাত্রে ঘোরলাগা বুঁদবুঁদ
যবনিকাপাত :
কবজকুন্ডল উপড়ে নিলে পিচ্ছিল রেখাপথে জবা রং
আভরণশূণ্য বাতাসী'র দেহে শ্যাওলা'র ঘ্রাণ
ভাড়
পেনশনটুকু বাদ দিলে
মনসা পুজোর ঘট ।
গুমটি দোকানে ছায়াশরীর,
চিনি কম লিকার ।
নিষেধাজ্ঞা আকাশ ছুঁয়েছে,
শরীর-মনজুড়ে মধুমেহ ।
ডাস্টবিন পিঁপড়ের দখলে,
লক্ষ্যভ্রষ্ট চায়ের ভাড় কাৎ ফিরে শোয় ।
লিকারে মিশে থাকা কিছু চাহিদা
এখনও অবশিষ্ট
কে, কখন মাড়িয়ে যায়...
প্রেমিক
একাকিত্বের ক্লান্ত ছায়ায় উল্লাসে মাতে নির্জনতা,
বৈধব্যের রঙের মতো নির্লিপ্তি ছড়ায় ঘন সাদা ফ্যান।
বিষাদের গা বেয়ে টুপটুপ ঝরে শিশির কণা ,
জ্যোৎস্নার প্রলাপের মতো ভেঙে যায় শ্যাঁওলার ধ্যান।
বিষন্ন নিদাঘ রাতে জোনাকিরা শিখে নেয় বাতাসের শ্রম,
দুঃখের বুদবুদের মতো উড়ে যায় মিহিদানা সুখ।
কালাচের বিষে বিষে ঠোঁটে ধরা শ্বাপদের ভ্রম,
খেলি এসো - প্রগাঢ় লোমশ যেথা প্রেমিকের বুক।
যৌবন
পিপাসার গন্ধের মতো নির্ভার যৌবন। সুখের
চৌকাঠে আলপনা এঁকে রাখে শূন্যতাগুচ্ছ।
যৌনতার ক্ষুধার মতো স্বচ্ছ নদী। বিরহের
আগুনের ধুলোয় পুড়ে যায় শিৎকার স্বর।
জীর্ণতার দেয়ালের মতো শুদ্ধ আঁধার। প্রতারকের
উরুতে বসে জুয়া খেলে বিশ্বাসী বক।
রক্তের স্রোতের মতো শীতল বরফ। বিবেকের
আঙিনা দিয়ে হেঁটে যায় পরবাসী খুনী।
মৃত পোস্টকার্ডের মতো শান্ত হৃদয়। ঠিকানার
গর্ভে হারিয়ে যায় অসংখ্য ভ্রমহীন পিনকোড।
আর কত হাঁটবি, আমিনা ?
আমিনা, খেয়েছিস কিছু? কতদিন অভুক্ত তুই? তোর বাপকে দেখছি না, কোথায় গেল সে? বাপের উপর তোর রাগ হয়েছে বুঝি?
জানিস, আমারও খুব রাগ হয়। তোর বাপ একটা পাষণ্ড, নির্বোধ। মেয়ের আব্রু রাখতে পারে না যে বাপ, তাকে আর কি-ইবা বলি! একটা ষাঁড়কে ভাঙা ঘরের চাল ফেঁড়ে খাওয়ায়! কতটা অবিবেচক হলে করতে পারে এ কাজ! নিজের জোটে না, আহাম্মকের মতো মুখের গ্রাস একটা পশুকে খাওয়ায়! তোকেও তো দিতে পারেনি নিরাপত্তা, নিদেনপক্ষে একটা কম দামী ফ্রক।
খাঁ খাঁ রোদে জল আনতে পাঠালো তোকে। কি নিদারুণ বিড়ম্বনা, কি অপমান সয়ে জল বয়ে আনলি হিঁদুর দীঘি থেকে।
আমিনা, ভোর হয় হয়। আর কত হাঁটবি? তোর বাপকে দেখছি না! পথেই মরলো বুঝি? কার হাত ধরে তুই হাঁটছিস? তোর ছেলে বুঝি? তুই মা হলি কবে, আমিনা? স্বামী ছাড়াই মা হওয়া যায় বুঝি? পথেই কি ঘটে প্রসব যন্ত্রণা? পথেই কি ঘটে প্রজনন, বিস্তার? তুই কি ক্লান্তি জানিস না, আমিনা! কি নাম রেখেছিস ছেলের, মহেশ না গফুর?
শোন আমিনা, জানিস তো, শরৎ বাবু আর তোর বাপ অভিন্নহৃদয়। তোকে দিব্যি অন্ধকারে নামিয়ে বাতাসে মিশে গেলো দুজন। কি ভয়ানক নির্দয় ওরা! তুই কি ক্ষমা করবি ওদের? করিস না। সবাই ষড়যন্ত্রী।
তোর ছেলের বাপ চটকলেই কাজ করে বুঝি? আমিনা, এবার তো থাম। একটু জিরিয়ে নে, তারপর না হয় হাঁটবি আবার। আর কতটা পেরলো চটকল পড়বে, জানিস কিছু? এমনওতো হতে পারে, চটকল ছাড়িয়ে তুই চলে এসেছিস অন্য একটা গ্রহে। অন্য একটা মানচিত্রে। তোর গায়ের সেই মলিন শাড়িটা কোথায়? কোথায় ফেলে এসেছিস লজ্জা? এভাবে উলঙ্গ আর হাঁটবি কতকাল?
আমিনা, একবার পেছন পানে দ্যাখ। দ্যাখতো আমার পায়ের নিচে শাড়িটা, চিনতে পারছিস কিনা? সেই কবে মহেশ লালা ঝরিয়েছিলো, আঁচলের গায়ে গায়ে কেমন করে উঠে আসছে তৃষ্ণাদগ্ধ দেশ! দ্যাখ আমিনা, চেয়ে দ্যাখ, আমার পা, আমার শরীর অবশ হয়ে আসছে। নড়তে পারছি না, ছুটতে পারছি না। বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছি, ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছি।
মেয়ে আমার, দাঁড়া একটিবার। শাড়িটা নে, শাড়িটা তোর।
গর্ভজাত
সকালে গরম চায়ের সাথে
একটা কবিতা গিললাম।
পুরুষদেহেও গর্ভসঞ্চার হয়!
বাংলা অথবা ইংলিশ মিডিয়াম,
সুরক্ষার প্রশ্নে বিনিয়োগ হোক আবেগশূন্য
সামনে ফেব্রুয়ারি - একুশে
আলুর ফলন বেশি হলে পটোলের জনপ্রিয়তা কমে না
সুতরাং উদ্রেক আবাদের বিশেষ প্রয়োজন নেই।
অপঘাতে মৃত্যু অভাবিত নয়,
বুকের আঘাতগুলো শিরোনাম হয় না
অপঘাত বলে চালিয়ে নেয়া যাক!
জলপাই রংয়ের আকাশ -
কল্পনায় মাত্রাজ্ঞান লোপ পেলে এমন কি হয়?
বর্নমালায় মাত্রার প্রয়োজন ঠিকই,
অ বোধ শিশু - একটু মানিয়ে গুছিয়ে নেয়া
সময়ের চাহিদা অভিযোজন।
বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষার দায়িত্ব তোমার -
হলদে কুসুমরংয়া শাড়িতে তোমায় বেশ লাগে।
পারিযায়ী দুঃখগুলি ফিরে ফিরে আসে
জামরুল গাছের ডালে
অবাধ্য ছায়ামূর্তি শরীর মেখে।
খসেপরা আঁচলের খুঁটে বাধা বিবর্তন সন্দর্ভ,
বুকের খাঁজে বিষ নিঃশ্বাস!
জ্যোৎস্না শামিয়ানার তলে কিছু অশরীরী অলৌকিক শব্দ বয়ঃসন্ধি পার করেছে,
এবার ফুটবে - ভাঙবে - গড়বে .........
ভাবছি, গর্ভপাত করিয়ে নেবো
বড্ড দেরী হয়ে গ্যাছে !
নারী দিবসে বক্তৃতার খসড়া
নারী স্বাধীনতা বিষয়ক আলোচনাসভায় যোগদানের পূর্বে
রাত্রিজেগে একটি সুদীর্ঘ বক্তৃতার খসড়া প্রস্তুত করবেন, অতঃপর
বাল্যবিবাহ, সমানাধিকার, নারী-পুরুষে বৈষম্য,
পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার আগ্রাসন - এইসব
যন্ত্রণাক্লিষ্ট শব্দবন্ধ মাথায় নিয়ে ঘুমোতে যাবেন।
একটু বেলার দিকে ঘুম থেকে উঠে দেখবেন, ঝলমলে পরিষ্কার আকাশ।
এই আবহে টেবিলে গতরাত্রির বক্তৃতার খসড়াটা খুঁজে না পেলে কুরুক্ষেত্র বাঁধবে।
আপনি সম্ভাবনাগুলো ঝালিয়ে নেবেন -
হতে পারে অপ্রয়োজনীয় ভেবে খসড়াটা বাইরে ফেলে দিয়েছেন মা কিংবা স্ত্রী,
হতে পারে কাজের মেয়েটা সকালে ঘর ঝাড় দিতে গিয়ে...
কিংবা আপনার সপ্তম বর্ষীয়া মেয়ে
খসড়াটি কুটিকুটি করে রান্নাবাটির উনুনে সকালের রান্না চড়িয়েছে ...
ঝগড়া-অশান্তি, তদন্ত এবং উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পরে
বিবিধ সম্ভবনার অকাল মৃত্যুতে
ক্রোধে আগুন ঝরবে আপনার সর্বাঙ্গ দিয়ে।
কূলকিনারা না পেয়ে ভাববেন,
বাবা ঠিকই বলতেন, আপনার মা একজন দায়িত্বজ্ঞানহীনা মহিলা।
আপনার স্ত্রী শিক্ষিতা, অথচ যাকে বলে অকাট মূর্খ একটা।
কাজের মহিলাটা হয়েছে একটা হাড়-হাভাতে অশিক্ষিতা।
সবাই চুপ। নিস্তব্ধ কুরুক্ষেত্রে
সত্য-ন্যায়ের ধ্বজা নিয়ে একমাত্র আপনি একা টিকে আছেন!
এমতাবস্থায় আপনি খেয়াল করবেন
টেবিলের মধ্যমণি ি বোবা এবং মেয়েলি স্বভাবের পেপারওয়েটটি
নিঃশব্দে আপনার ক্রোধদগ্ধ শরীরে উপহাস ছুঁড়ে দিচ্ছে।
ঠিক তখনই মনে পড়বে টেবিলে নয়, বক্তৃতার খসড়াটা আপনি আপনার জামার পকেটে রেখেছিলেন।
জামার পকেট থেকে খসড়াটি হাতে নিয়ে
পুরুষোচিত পকেটটিকে ধন্যবাদ জানাবেন।
এবং
নারী স্বাধীনতা বিষয়ক আলোচনাসভায় যোগদানের জন্য
বাড়ি থেকে বেরনোর পূর্বে
মা, স্ত্রী, কাজের মেয়ে এবং সপ্তম বর্ষীয়া মেয়ের উদ্দেশ্যে অস্ফুটে
সহানুভূতি ঝরে পড়বে আপনার গলা বেয়ে -
"বেচারা নারী! বেচারা নারীশক্তি!"
সীমান্তে একটা মৃত যোনি
প্রিয় একুশে ফেব্রুয়ারি,
ফিরে যাওয়ার পথে কানাই মান্ডি'র পুকুর ধার হয়ে যেও।
আমগাছে মুকুলে মুকুলে ছয়লাপ, বাঁশঝাড় ডাইনে রেখে
সরু লাল রাস্তা ধরে একটু এগোলে
কৃষ্ণচূঁড়ার লালের আগায় জোনাকি আর জোনাকি। তারপর
ঢিব দেয়া কিছু বিচালি রাখা আছে,
পাশেই একটা অপাপ শান্ত শিমুল গাছ -
নরম তুলো তোমার মুখে এসে পড়বে,
অক্ষিগোলক ঢেকে যাবে গুচ্ছ গুচ্ছ সাদায়।
প্রিয় একুশে ফেব্রুয়ারি,
আরেকটু এগোলো করিম চাচার এক বিঘা জমি -
ধানের শীষে, নুয়ে পড়া পাতার ফাঁকে ফাঁকে গংগা ফড়িং, নাম না জানা মাকড়।
ঝিঁ ঝিঁ পোকার সঙ্গতে হুক্কা হুয়া ডাকবে সদলবল পাতি শেয়াল ,
পায়ের কাছটিতে একটা ব্যাঙ এসে পড়বে, কিংবা তোমার রাস্তা কাটবে এক অন্ধ গোখরে,
সোনালী ক্ষেত্রে অবিরাম খসে পড়বে ছোট - বড় তারা দল।
প্রিয় একুশে ফেব্রুয়ারি,
আল পথে হাঁটতে গিয়ে একটা টুলু পাম্প পড়বে,
যন্ত্রের অহং পেরোলেই কচি কচি আগাছার শীরে মুক্তো দানা।
আরেকটু এগোলে খানিকটা অবাকই হবে -
বাঁ হাতে শিবু মন্ডলের ক্ষেত যেখানে শেষ ,
সীমানা ঢেকে আছে একটা কাঁচা হলুদ কামিজ, রক্তাক্ত ছেঁড়া পাজামা ।
ওড়নাটা পৃথিবী প্রদক্ষিণে বেরিয়েছে সন্ধ্যার বাতাসে।
দু পা গেলে চোখ জুড়োবে,
ঘোষদের জমিতে ফসলে ফসলে বন্য সুখ -
কচি ঘাসের আগায় কাপুরুষের বীর্য, লোহার রড, স্টেইনলেস ব্লেড।
প্রিয় একুশে ফেব্রুয়ারি,
চমকাবে না - থমকাবে না।
তোমাকে আরও কিছুটা এগোতে হবে,
ঘোর সন্দিগ্ধ এক পিতার সঙ্গে দেখা হবে তোমার ;
একুশ বাসন্তী'র মৃত যোনি আগলে বসে আছে বোবা-কালা জনার্দন মাঝি।
যৎসামান্য দূরে চাঁদ থেকে নেমে আসবে সুধীগন,
যতদূর চোখ যায়, কালো কাপড়ে চোখ বাঁধা সুদীর্ঘ মৌন মিছিল।
প্রিয় একুশে ফেব্রুয়ারি,
শুনতে পাবে
শিরিষ গাছের পাতায় নৈঃশব্দ ভাঙা খসখস,
ধর্ষক বাতাসের প্ররোচনায়
কলাগাছে ছেঁড়া পাতার রিডগুলো মুহূর্মূহ উঠছে - নামছে ;
ঈশ্বরের অলৌকিক আবহ সঙ্গীত।
ওপারে
বিশু পাগলটা ফুটপাতে, ব্রিজের তলায়
সারাক্ষণ আড়ষ্ট, জুবুথবু। নোংরা দেহ
থেকে প্রাণপাখি উড়লো যেদিন, চাঁদা
তুলে অন্তেষ্টি সেরেছি - ওর মুখাগ্নি হয়নি।
ও বাড়ির বিধবা শীতু পিসি। পুঁইমাচা
ভেঙেছিলাম বলে শাপান্ত করেছিলো
গোটা একমাস জুড়ে - ওর শ্মশানযাত্রীর
লিস্টে আমার নামটা ছিলো একেবারে
প্রথম সারিতে।
ধর্ষিতা আয়েশাকে শ্বাসরোধ করে মেরেছিলো
যে, প্রমাণের অভাবে এখন সে নিষ্কলুষ।
সামনের মাসে ধর্ষকের বিয়ে। সেদিন
আয়েশার মৃত্যুতে কলম থেকে একটাও
কবিতা বেরোয়নি।
বাতাসি জানতো, ওকেই ভালোবাসি! তবু
আমার কুৎসিত চেহারা আর অনটনকে
ঘৃণা করতো প্রবলভাবে। একদিন কাকে
যেন পালিয়ে বিয়ে করলো। বিয়ের দুমাসের
মধ্যে আগুন! হত্যা না আত্মহত্যা - আজও
জানতে পারেনি কেউ!
বউ আমার একা থাকতে পারে না। আমার
মধ্যেই ওর নির্ভরতা। দেরী করে ঘরে ফিরলে কাঁদতো, মুখের গন্ধ শুকতো - এখন সে
সাহসিনী! এ.টি.এম, পাশ বই, শকুনের
লোভদৃষ্টি - সব একা হাতে সামলায়!
আমাকে জড়িয়ে না ধরলে ছেলের ঘুম
হতোনা একসময়। মায়ের কাছে ঘ্যান ঘ্যান
করতো, কাঁদতো। দিনে দিনে ছেলে
স্বাবলম্বী। স্মৃতির বিপরীতে পাশ ফিরে
শুতে পারে অনায়াস দক্ষতায়।
বিশু পাগল, শীতু পিসি, আয়েশা, বাতাসি
- ওপারে সবাই আমার প্রতিবেশী।
বিশুকে সবাই খুব মানে, সমীহ করে। আমি
ওর অন্ধ অনুগত। বাতাসির প্রেমের প্রস্তাব অবলীলায় প্রত্যাখ্যান করেতে পারিনি।
ওকে বলেছি , ভালো থেকো। আয়েশা মনে
মনে আমাকে চায়, আমিও।
শীতু পিসি জনে জনে কান ভাঙায়–
সমাজ বলে তো একটা কথা আছে, না কি!
বিশু পাগল, শীতু পিসিকে আর এক বিন্দুও ভালোবাসেনা .......