রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করবে কি, শুধু হাত ধুয়ে আর ঘরে বসে থেকেই কোটি কোটি মানুষ ঘুমিয়ে পড়বে। দিন আনে দিন খায় মানুষের মুখের ভাষা– করোনায় কি মরব, না খেতে পেয়েই মরে যাব। ভাবলেই শিউরে উঠি! শত্রু আড়ালে। অদৃশ্য। মেঘনাদও মেঘের আড়াল থেকে বেরিয়ে ছিল। আর এ- ব্যাটা করোনাসুর ঘাপটি মেরে বসে আছে ।
বাইরে বেরোলেই যুদ্ধ। আর আমরাও নিধিরাম সর্দার--ঢাল নেই ,তলোয়ার নেই । থাকার মধ্যে খালি সাবান। গরীব-গুর্বো জানেই না স্যানিটাইজার কী। খায় না মাখে। কাপড় কাচা সাবানে হাত ঘষতে ঘষতে পেটের রোগের শিকার হচ্ছে । কেউ N 95 মাস্ক পরে, গালে ফেস পাউডার লাগিয়ে টিভিতে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন অথচ ডাক্তারবাবু-নার্সদিদিমণি হাটুয়া মুখোশ নিয়ে বর্ষাতি পরে রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন।
গুলবাজ আর ধাপ্পাবাজের কবলে গোটা দেশ। কেউ বললেন তালিবাজাও ,থালিবাজাও, দিয়া জ্বালাও। পাবলিকও মজা নিল ! শুধু দিয়া জ্বালিয়ে কি হবে? ফাটাও শব্দ বাজি , পোড়াও আতসবাজি। দেশময় অকাল দেওয়ালী। কেউ বলছেন–ঘরে থেকেই চিকিৎসা করান। সেরে যাবেন।
যারা বিদেশ থেকে করোনা উপহার নিয়ে এল তাঁদের বাধ্যতামূলক রাষ্ট্রীয় কোয়ারেনটাইন-এ রেখে দিলে , আজ একশ তেত্রিশ কোটি মানুষকে
লকডাউনে রাখতে হোত না। বিমান থেকে নেমে হ্যালো হাই বলে বাড়ি ফিরে টিকটক্-এ মজে চিলিচিকেন, ফ্রায়েড রাইস , বিরিয়ানি --কোন্ টা ছেড়ে কোন্ টা খাবেন যখন ভাবছেন তখন পরিযায়ী শ্রমিকরা হাঁটতে হাঁটতে পথেই মারা যাচ্ছেন , মধ্যবিত্তরা খালি হাত ধুয়ে-ই যাচ্ছেন, গর্তে জল ঢুকলে ইঁদুর যেমন বেরিয়ে আসে তেমনি গরীবরা পেটের জ্বালায় রোজগারের চেষ্টায় রাস্তায় বের হলে পুলিশের ঠ্যাঙানি খাচ্ছেন। শীত এসে যেমন নগ্ন করে দেয় গাছকে, তেমনি "করোনা" রাষ্টের দূরদর্শিতাকে..।
আজ বিশ্বব্যাপী ভয়ঙ্কর যুদ্ধ । না , কোন যুদ্ধাস্ত্র নেই। অথচ, গাছ থেকে ঝরা পাতার মতো লাশ পড়ছে । একদিকে, করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ , অন্যদিকে, মানুষের জন্ম সূত্রে পাওয়া খিদের সঙ্গে যুদ্ধ , জানিনা এর অবশ্যম্ভাবী ফল কী হবে। তবে– 'ঝড়ের পর সব নৌকার তীরে ফেরা হয়নি।'--এ কথা জেনেও ঘুমোতে যাই এক বুক স্বপ্ন নিয়ে–করোনা যুদ্ধ মুক্ত একটা সকাল আসবে রাত্রির
বৃন্ত ছিঁড়ে।