logo corona

দেখা হয় যদি পুরানো প্রস্তরে ।। শ্রীতনু চৌধুরী

 

ভাবছি , যে জীবন করোনা লিখিত- তা থেকে মুক্তির ওপারে যখন দেখা হবে, তখন চিনতে পারবে তো? দুজনেই অদৃশ্য। একজনের পরমাণু প্রকৃতি। মাথায় মুকুট পরা অদৃশ্য যমের মত- কেবল মৃত্যুদাতা। শুধু অনুবীক্ষনের তলায় দৃশ্যমান, কেউ কি দেখেছে ধর্মদণ্ড তার হাতে? ওহে পৃথিবীর জ্ঞানী ও পণ্ডিতগণ, বলুন, ঈশ্বরকণা থেকে কত যোজন দূরের দেব দানো দস্যু- কে সে? আর একজন সর্বার্থে অদৃশ্য- তবুও নাকি আছে জলে স্থলে অন্তরীক্ষে, প্রতিটি প্রাণে, প্রতিটি পাতায়, প্রতিটি প্রেমের বুদ্ধ হাসিতে। কেউ দেখেনি কেউ দেখবে না, তবুও সে নাকি সৃষ্টি স্থিতি প্রলয়। সে' ই জন্ম সে' ই মৃত্যু। শুভ অশুভ'র যুদ্ধে চিরদিন নাকি সে' ই জয়ী। কোথায় তবে আজ সেই আদিশক্তি? রোমকূপে রোমকূপে লক্ষ ব্রম্ভাণ্ড ধারণকারী পরমপিতা ভগবান?

সমস্ত সাজ পোশাক আগাপাশতলা পালিশ করা দেহের বদলে আবার যদি প্রস্তর যুগে দেখা হয় তোমার আমার–কে আগে নত করবে দৃষ্টি? ভেবোনা সেদিন বেশি দূর! সমস্ত রং ধুয়ে সভ্যতা আবার যাত্রা শুরু করেছে উলটপুরানে। অহংকারী ললাট তুলসীতলার কালো মৃত্তিকা লেপন করে উলঙ্গ কেন্নোর মতো মাটির কাছেই গিয়ে খুঁজছে স্থিতি। না কাটা চুল- শ্মশ্রু- গুম্ফ, উগ্রগন্ধ-গা, পশুর মত ধারালো নখ নিয়ে অনতিদূরের আদিম এক সকালে ওরাংওটাং এর মত ঝুপ্ করে গাছের ডাল থেকে নেমে তোমার সামনে গিয়ে দাঁড়াব যখন, তুমি কি তখনও নেলপালিশ লিপস্টিকময় জিন্স- টপের সেই মোহিনী? নাকি তোমাকেও দেখব আদিম গুহাকন্দর থেকে অবাক তাকিয়ে থাকা কোনো জারোয়া রমনীর মতো–যার কষ্টিপাথরের গা থেকে চুঁইয়ে পড়ে আদিম লাবণ্য! পাতার পোশাক থেকে অবলীলায় উঁকি মারে পাথর কোঁদানো শঙ্খ-প্রদীপ! চিরচেনা নদীর ঘাটে পড়ে আছে হালভাঙা নোয়ার নাও। আগাছা জঙ্গলাকীর্ণ ঘাটে কেউ নেই, কোত্থাও নেই। কেউ আসেনি এখানে মন্বন্তরের পার। কেবল অজানা পৃথিবীতে মুখোমুখি এসে দাঁড়াবে অচেনা দুটি পুরুষ ও প্রকৃতি। যদি হাত বাড়াই তবে কী দিয়ে পাঠাবে প্রথম সংকেত? জানি রয়ে যাবে কিছু ভাষা। সভ্যতার কণ্ঠস্বর কেড়ে নিতে পারবে না কেউ। কী বলবে! মনে পড়বে পুরানো প্রেম! নাকি শুধুই শোনাবে বেঁচে থাকার সাতকাহন! কী দিয়ে করবে আরতি? দোলাবে চামর? প্রজ্জ্বলিত প্রদীপ সামনে তুলে ধরলে আমিও কিন্তু অনেকদিন পর দুহাতে তুলে নিতে পারি অমোঘ সে শঙ্খ! যদিও আগন্তুক নই তবুও চারপাশে এসে হাজির হবে তখন আড়মোড়া ভেঙে জেগে ওঠা পৃথিবীর আদি বংশধর। গর্ত থেকে বেরিয়ে আসবে উলোঝুলো শেয়াল। জল থেকে লাফ দিয়ে হুস করে পায়ের কাছে এসে আছড়ে পড়বে শুশুক। লৌকিক ঘাটিয়াল কলার ভেলায় সাজাবে মান্দাস। তিতির ময়না শালিখের আর পানকৌড়ির ভারে ঝুঁকে নদীর বুকে চুম্বন করবে বাঁশ ও পাকুড়ের ডাল। পাখিদের সাথে ভাগ করে খেতে হবে জাম আর জামরুল। বকের ডানায় লাগা রৌদ্রে হাঁটুজল ঢেইয়ে একসাথে জল খাবে হরিণ আর মানুষ!

সব কি হয়ে যাবে সভ্যতার উষালগ্নের মতো এখনই জঙ্গলময়? আমাজনে লাগবে না আগুন? পৃথিবীর খাদানে খাদানে নতজানু হয়ে প্রকৃতিকে কি ফিরিয়ে দেওয়া হবে তার হৃদয় সম্ভার? কে জানে? যে হাত কেড়েছে এত সে কি কখনো শুদ্ধ হবে? তবুও স্বচ্ছ শিলাই' এ পড়বে আমার প্রতিবিম্ব। সৃষ্টির ঊষালগ্ন থেকে নিজের সামনে নিজে দাঁড়াইনি কখনো। আঁৎকে উঠব।চিনতে পারবোনা নিজেরই অবয়ব। নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করব–কে তুমি? জলমানব গর্ভগৃহ থেকে উত্তর দেবে– আমিই সেই, তোমার অবিনশ্বর আত্মা, আমিই ঈশ্বর। মহাপ্রলয়ে সব মন্দির, মসজিদ, গীর্জা বন্ধ করেছে দ্বার। কোথায় নেই সে। আসলে কেউ কোত্থাও ছিল না কখনো। তুমিই গড়েছ ভগবান। তোমারই সে স্বর্গ, তোমারই নরক। তুমি খাওয়াও তাই সে খায়, তুমি পরাও তাই সে পরে রাজবেশ। তুমি শুনতে চাও তাই সে বাজায় মোহন মুরলী, তুমি চাও তাই আজান দেয়, নিজেকে নিজেই সে বিদ্ধ করে ক্রুশে। তোমার রিপু' ই সৃষ্টি করে রিপু দমনকারী। তোমার ইচ্ছায় তার সৃষ্টি, তোমার আকাঙ্ক্ষায় তার স্থিতি, তোমার আস্থাহীনতায় তার বিনাশ। অথচ স্বচ্ছ জলের অন্তরে আজ যাকে চাক্ষুষ করছ এতদিন নিজের অন্তরেই খুঁজে দেখোনি তাকে। আমিই তোমার শুদ্ধস্বত্ত্ব, অনন্ত প্রেম, আমিই নিরবিচ্ছিন্ন ধারা, আমিই তোমার রাধে। আমাকে তুমি চিনতেই পারোনি। তাই 'পৃথিবীর গভীর গভীরতম অসুখ' এখন। অলীক স্বর্গের পিছনে অনেক ছুটেছ- কিন্তু জানো না এই পৃথিবীই হল স্বর্গ। তেত্রিশ কোটি নয় অনন্ত কোটি জীবের মধ্যে বিরাজ করছি একমাত্র আমিই- অনন্ত কোটি ঈশ্বর। তাই কারো নাকের সামনে থেকে প্রাণবায়ু কেড়ে নিয়ে একটি ঈশ্বরকে হত্যা করো তুমিই। মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে অহরহ অগনিত ঈশ্বরকে হত্যা করো তুমিই।যার যত বাসস্থান ধ্বংস করো তুমি জানো না মন্দির মসজিদ গীর্জায় ঈশ্বরকে ততবার গৃহহীন করে দাও তুমিই। তাই ফিরে এসো আপন মন্দিরে। তাকাও স্বচ্ছতায়, শুদ্ধতায়, তাকাও গভীরে। নির্লোভ হয়ে ফিরে এসো পৃথিবীর পান্থশালায়। শ্রেষ্ঠতম সুন্দর ও পবিত্র তো তোমার অন্তর্নিহিত ঈশ্বর- যার সামনে এসে থমকে দাঁড়ায় মৃত্যু। সমস্ত অস্ত্র ত্যাগ করে নতজানু হতে বাধ্য হয় চেনা জানা ভয়ংকর সব দস্যু দানব। শুদ্ধ-বাহনা জ্ঞান ( বিজ্ঞান) কি তবে এই মহাসংগ্রামে বসে থাকবে নিশ্চুপ? না। শুভ অশুভের যুদ্ধে তোমার কাল্পনিক দেবীর হাতে অস্ত্র তুলে দেবার মতো সেও ঠিক একদিন তোমার হাতে তুলে দেবে বিবিধ আয়ুধ। ধৈর্য ধরো। আপাতত চলো, যাপন করো গুহাবন্দী জীবন। আবার ভাগ করে নিতে শেখো পৃথিবীর জল, বায়ু, মাটি। অখণ্ড সংসারে ফিরে পুঁটলি থেকে ছোলা মুড়ির মতো এবার খুলে বের করো না করা কর্তব্যকর্মগুলি। লোভের বেসাতি ছেড়ে সর্বংসহা পৃথিবীকে ফিরিয়ে দাও আজন্ম লুণ্ঠিত অলংকার, তার অস্থিমজ্জা। মনে রেখো নবলব্ধ এই গুহাজীবন কারো একার নয়, এ জীবন যুথবদ্ধ। মনে রেখো সভ্যতার শৌর্য মিনারে বসে যতই গর্বের ফানুস উড়াও, প্রকৃতি ঠিক বুঝে নেবে তার হিসেবনিকেশ। নাহলে অদৃশ্যপূর্ব সামান্য কোনো শত্রুর নিকট এভাবেই বারবার পর্যুদস্ত হয়ে যাবে নকল অশুচি তোমার জীবন।
রাধে, মাচানতলা খালি করে চলো আমরাও ফিরে যাই স্ববৃত্তে। সংসারে সন্ন্যাসী হয়ে উদযাপন করি দূরত্ব বিলাস। হৃদয়ের চোরা কুঠুরিতে গোপনে জড়ো করি স্মৃতি থেকে তুলে আনা টক্ ঝাল প্রেমের বয়াম আর বিরহ মধুর। পুরানো সুরার মত এ দিয়েই বাড়িয়ে নিতে হবে অন্তঃস্থ ক্ষাত্রতেজ( immunity)। কারণ ঢাল হয়ে প্রকোষ্ঠ প্রাকারে যাদের দাঁড়িয়ে থাকার কথা তাদের কেউ কাঁসর- ঘণ্টা বাজিয়ে পালন করে চলেছে অকাল বোধন, তো কেউ ভাঁড় পরিবৃত্তে চকখড়ি হাতে রাস্তায় রাস্তায় কেটে চলেছে গণ্ডি আর এখনো একে অপরের প্রতি ছিটিয়ে চলেছে নিষ্ঠীবন। তাই ভালো করে বুঝে নাও, তুমি আমি আমরা কেউ রাষ্ট্র নামক অমৃতস্যর পুত্রা নয়- অভিভাবক হীন কেবলই এক রামগড়ূরের ছানা। পারো তো নিজে বাঁচো। অন্তে রাষ্ট্র নিজেই নিজেকে বাহবা দিয়ে স্বহস্তে পরে নেবে বিজয় মুকুট।

একক কবিতা সন্ধ্যা



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...