একক কবিতা সন্ধ্যা ।। সৌমাভ

saumavo

 সৌমাভ-র এক গুচ্ছ কবিতা 

 

 

গায়ে-হলুদপুর

ঘুসুমের চন্দন-ফোঁটা মেখে পায়ের বিরহকুসুম
হেঁটে গেছে গায়ে-হলুদপুর গ্রামের দিকে,
নিচু মোরামের রাস্তায় তোমাকে দেখায়
ঝরাপাতা দাবদাহ-বনে যতদূর ডাক যায়
তারও দূর-দুপুরের এক ভাঙা ডাকঘর,
ধসে পড়া দেয়ালে মরমী চিহ্ন-জল রেখে
ঢিবির পশ্চিমপারে সূর্যঘোড়া ছুটে যাবে
বনফুল বেনেবউ বেহুলাদের দেশে...
শুভ্র পথের দুধারে পূর্বরাগ-বকের মতন কতবার
বিবাহকুসুম হইয়াছে আমাদের সন্ধে-শ্মশানের আঁচে
দু-চোখের ঘন আঠা গড়িয়ে-মাড়িয়ে ছুঁয়েছে পোয়াতি বাতাসের স্তন...

 

ব্যাঙ

আমাদের দেখা হয়েছিল গালিবের দিব্বি নামের রাতে,
তোমায় দেখাচ্ছিল যেন প্রিয় শেরের বুলবুলি
আমি বহুজন্ম সাঁতরে আদিগন্ত মাঠ পেরিয়ে এসে
তোমার চরণে সমীপেষু হয়ে আছি
মাঝরাতের বৃষ্টির পর ডেকে যাই রোজ,
ঘড়ির হৃৎপিণ্ড ভেঙে, কবিতার রক্ত ছিঁড়ে
কোনো একদিন আমাদের দেখা হবে মরমী কচুপাতাটির নিচে

ঢালু জলে গড়িয়ে যাবে সময়ের উভচর ডাক

 

অভিমান

কথা হয় না কতদিন তবুও আমরা দুজন আছি পাশাপাশি
কবরের উপরে দুটি নিভে যাওয়া ফুলের মতন প্রদীপের অপেক্ষায়!
ইশারা করি, শিষ দিই...
ঝড়বাদলার দিনে গল্প করি যেভাবে ভোররাত অবদি নিগুঢ় গল্প বোনে
সমদূরত্বে থাকা দুটি স্পর্শহীন তারা,
তবু আমাদের কথা নেই, ব্যথা নেই, স্বপ্ন নেই আর...
এক মায়াবী হাঁস শিকার করে শূন্যের দিকে উড়ে গেল ঐ রাতের শিকারী
আকাশ থেকে ফেটে ফেটে পড়ছে চাপ চাপ রক্ত... সাদা ছেঁড়া ডানা,
আমাদের শরীরযুগল ভাসছে হাওয়ায় যেন
মুমূর্ষু হাঁসের গা থেকে ঝরে পড়া দুটি শুভ্র বেদনার পালক..

হাঁসটির নাম ছিল অভিমান, কথিত আছে...

 

 

ময়ূরকন্ঠী চিতা
সূর্য ডুবেছে সেই নত প্রজ্ঞায়
সন্ধের অজ্ঞাতযানে চেপে চলে গেলে রাত্রিসমর্থিতা,
যে ফল আঁধারের প্রিয় তার বিদেহী ছায়া আলোর আত্মীয়,
দেহগর্ভ, দূর সন্ধ্যা-কীর্তনগানে জেগে ওঠে
ঋতু-বিস্মরণ, আগুন বৈভব, ময়ূরকন্ঠী চিতা

 

কাজল

যতখানি চোখ যায় তোমার, আমি ততখানি পথ ফেলে আসি
আয়নার সামনে কাজল নাকি কাজলের সামনে ধরেছ আয়না?
আইলাইনার, নিপুনটান, চোখের দুদিকে এঁকে নাও সাঁকো
যতটা কাজল ধরেছো চোখে, ততটা কী আমাকে ধরে রাখো?

 

ঈশ্বর

বিড়ালের ডাকনাম ঈশ্বর আর ঈশ্বর আমাদের পাড়াতেই থাকে। যেতে আসতে তাকে
দেখি ইস্কুলবাড়ি অথবা শীতলা মন্দিরের চাতালে। খুব পরিপাটি করে চোখে চোখ
মেলাই। বিকালে টালি থেকে খসে পড়ে মাটিতে যেন কোন ভুল হয়নি কোথাও। কালো
ঘন জলে ভুস করে ভেসে ওঠা মায়াবী মাছের চোখের মত অন্ধকারে তার মনি জ্বলে।
পুঁইমাচার নীচে সে শুয়ে থাকে, লেবুবাগানে জোনাকীদের সাকার্স দেখে, সাদা লোম
ফুলিয়ে ঘুরতে থাকে ঠাকুরমার পায়ে পায়ে। মাঝে মাঝে পুকুরের ওপর জারুল ফুলের
নিঃশব্দ ঢলে পড়া দেখতে দেখতে ঈশ্বর ঘুমিয়ে যায় আকাশের দিকে পা তুলে। তার
মুখ উঠানের শান্ত তুলসী পাতার মতো, বোজা-চোখ মাঝরাতের মিহিন বৃষ্টির মতো
অভিসন্ধিময়, চিবুক যেন শ্মশানের পাশে শাশ্বত প্রশ্নাতীত পুকুর, প্রচন্ড ডাকাডাকিতেও সে
চোখ খোলে না যতক্ষন না কেউ এসে দেবীপক্ষে তার চোখ ফুটিয়ে দেয়।

 

মুখ

উপন্যাসের মাঝখানে প্রিয় সেই পাতা,
সাদা পাতার ওই পারে শালবন, বনের কিনারে জল-নেই নদী,
দীর্ঘ দুপুরিয়া আলাপ পেরিয়ে কালো পাখিটি ধরেছে মনমর্জিয়া রাগ, 
এখন পৃথিবীর সমস্ত রঙ হলুদ, আর সমস্ত হলুদ পর্ণমোচী, 
এইসময় বাতাসকে মলয় বলে ডাকতে ইচ্ছে হয়...

তোমার মুখ উপন্যাসের প্রিয় সেই পাতা,
কতবার শেষ হয়েছে উপন্যাস তবু শেষ হয়নি ওই পাতা, শেষ হয়নি ওই মুখ,
মুখের শালবন, অনুচ্চ টিলাটির নীচে পাশ ফিরে শুয়ে থাকা নদী, 
কাঁধে হাওয়া-মিঠাই নিয়ে মেলা ভাঙার পর এপারে আসছে মলয়কাকু,
দূর থেকে তার পরাজিত মুখকে দেখায় এক জল-নেই-নদী…

 

সাপ

ফুলের গন্ধ শুঁকতে এসেছে অভুক্ত যে সাপ মেরো না তাকে,
অন্ধকারে, কী অপরূপ ওর জ্বলন্ত চোখ, যেন ঝড়বৃষ্টির রাতে
গল্প বলার ঠিক পূর্বমুহুর্তে ঠাকুরদার খাঁ খাঁ মাঠের মতন স্বপ্নালু দুই চোখ;
সে আসলে নিখোঁজ সীতাকে খুঁজতে বেরিয়ে নয়নাভিরাম সরোবরের 
সৌন্দর্য দেখে দাঁড়িয়ে যাওয়া নিস্পলক, বিমূঢ় শ্রীরামচন্দ্র,
কিংবা দুদিন খেতে না পাওয়া অবহেলিত পরাজিত কবি,
হাজারবার কবিতা ছাড়ার শপথ নিয়েও সাদা পাতার গন্ধ কিংবা 
মৃদু বৃষ্টির ভিতরে বাতাবিফুলের গন্ধে মন্ত্রমুগ্ধ, স্থবির এক মহাপ্রাণ।

অবসাদ

অবসাদ থাকে মোড়ের দর্জি দোকানে। বুড়া দর্জি সেলাই মেশিনে নানান মাপের অবসাদ খুলে উল্টে পালটে রাখে। অর্ডার অনুযায়ী, কোনো কোনো অবসাদের সেলাই খুলে মাপে ছোট করে, পুরানো চটা-ফাটা অবসাদের ঘাড়ের কাছে রিফু করে, কোন কোন অবসাদকে একেবারে নতুনভাবে বানায় নতুন ছিট
কেটেকুটে। সন্ধে যত রাতের দিকে যায়, পুরানো বাক্স খুলে নীল, সাদা, কমলা রঙের গল্পসুতো ঢেলে দেয় অবসাদের শরীরে। চোখে কম দেখে বুড়া দর্জি, সেলাই করার সময় প্রায়শই সমস্ত অবসাদকে মিশিয়ে ফেলে। ফলে, মিনতির ব্লাউজে লুকানো অবসাদ চলে যায় মন্টুর বউয়ের কাছে, মীরচাচার কুর্তার অবসাদ, অসীমজ্যেঠুর পাজামায়, ধানখেতের বৈকালিক বিষাদ একতারার তারে হলুদ হয়ে থাকে, ঘড়ির
দোকানের অবসাদ যায় স্টেশন মাস্টারের বুক পকেটে…একদিন দুপুরে যখন ঘুঘুটি ডাকছিল একা, দেখি ঘরের সিলিং থেকে ঝুলছে ফাঁস লাগানো বন্ধুর দেহ যার অবসাদ আমার মুখের মত দেখতে। 

 

বাইসাইকেল

কোনো একদিন চিঠি লেখা হত,
কোনো একদিন জমির তারখুঁটি দেখে মনে হত
আজ বিকালে বাড়ীতে আসবে পিয়ন,
কোনো একদিন অন্ধকারকে কারো মুখ ভেবে
ঝিল্লির ক্রন্দন ধ্বনি সারারাত বেজেছে আলো...

মহাপ্রলয়য়ের পর নরম আখর খুঁটে খাচ্ছে সঞ্জীবনী বক,
তাদের ডানার সাদা শব্দে কান নাড়ায় গোধূলির কাকতাড়ুয়া,
কাকতাড়ুয়া এক বিষণ্ণ পোষ্টম্যান
যার বাইসাইকেল জ্যোৎস্না রাতে কেউ চুরি করে নিয়ে গেছে ...

 

যে ধূপ নিভেছে

যে ধূপ নিভেছে আর জাগিও না রাতের আকাশে
এই যে বাতাসে করাত চলার শব্দ
এই যে ঝিঁঝিঁর হাহাপনা
দুটি একটি তারা
তালগাছের মাথায় জোনাকির মম-চিত্ত...
অন্ধকারের ভিতরে কেবল অন্ধকার হয়ে থাকা
ছবির ভিতরে ছবি
ওই পারে মানুষের যাতায়াত,
এই পারে পুড়ে যাওয়া ছাই
যে ধূপ নিভেছে আর জাগিও না রাতের আকাশে

 

নাইটগার্ড

তিনটি কুকুর রাত্রির দুঃখগুলি শুঁকছে রাস্তায়,
নাইটগার্ডের লাঠির ঠকঠক...
যতই অন্ধকারই হোক দূরে কোথাও আলো জ্বলে উঠছে
তারাদের কান্নামিয়ানো মুখে কী আজ সমস্ত বেদনা লিখে রেখেছো?
যত আলোই ফুটুক
তারাদের মাঝে মাঝে আঁধারের শূন্যতা আরো তীব্রতর হয়ে আসে
দুটি কুকুরের ডাকাতিয়া দেহে স্পর্শের বেদনা নিবিড় হয়ে উঠছে
নাইটগার্ড ছাড়া কাউকে এখন বিশ্বাস করা যায় না
মানুষদের কুকুর এবং কুকুরদের মানুষ হওয়ার সময় এখন,
বিকিকিনি শেষে ভাঙা বাজারে গাঁদার ছেঁড়া পাপড়ির মতন
হাসতে হাসতে নাইটগার্ডের খুব কাছে চলে গেল চারটি বেশ্যা...
সঙ্গমরত দুটি কুকুরের কথা ভাবতে ভাবতে
দূরে কোথাও ঘুমিয়ে পড়ে নাইটগার্ডের বউ...

 

মোরগ বিষয়ক

মৃত মোরগগুলির রঙ কী ছিল—
লাল সবুজ কালো না গেরুয়া?
এই প্রশ্ন উঠল বিতর্কসভায়।
কেউ বক্তব্য রাখলেন গরম জলে মোরগের ছটফট বিষয়ে,
কেউ খালপোশের নিঁখুত পদ্ধতি নিয়ে,
কেউ ‘মুরগির কান্না কেমন’ বিষয়ে হাততালি তুললনে সভাঘরে
কেউ কেউ মৃত্যুর প্রাক-মূহুর্তে
মুরগির রঙ পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্ন তুললেন...
কিন্তু খাওয়া-দাওয়ার পর কেউ বলতে পারলেন না
কোন মাংসটি ঠিক কোন রঙের মোরগের!
ক্ষমতা ও ক্ষুধা মিটে গেলে কোন রঙই মনে থাকে না কারোর!

 

পোস্ট-মর্টেম রিপোর্ট

আত্মহত্যা?
আত্মহত্যায় প্ররোচনা?
খুন?
দুর্ঘটনা?
সবাই জানতে চাইছে মৃত্যুর কারণ কী,
যদিও মৃত্যুর আগে কেউ
বেঁচে থাকার কারণ জানতে চায়নি!

 

আলপথ

যেন সমুদ্র ডানদিকে ফেলে হেঁটে গেছে ঝাউবনের দিকে,
এমনই ছিল আমাদের শৈশবের আলপথ,
ডানদিকে অ আ ক খ ফেলে পাঁচিল টপকে আমরা নেমে গেছি মাদার গাছ
আর জারুল বনের দিকে, বেগুনী হাওয়া এখনো দমবন্ধ হয়ে আছে ভিতরে,
যেন আঙুল দিলে এখুনি খসে পড়বে টুপটাপ... ঝুরঝুর…
কেউ কেউ ডানদিকে বাংলাদেশ আর পদ্মা নদী রেখে গঙ্গার এপারে এল সারাজীবনের জন্য,
ঠাকুরদার মত দেখতে কেউ কেউ বুকের বামদিকে বিয়াল্লিশের জাতীয় সরকার রেখে
নেমে গেল রূপনারায়ণ নদের দিকে, চোখে আটাত্তরের বন্যা পুষে অপেক্ষা করছে ঠাকুমা,
দাদুর ধুতিটা উড়ছে ঊনপঞ্চাশের ঝড়ের মত, আমরা নাতিপুতিরা ভাসছি আকাশে,
পড়ছি টুপটাপ, কেউ আশির দশকে, কেউ নব্বইয়ের দশকে, তারপর শূন্য
খুঁজতে খুঁজতে বামদিকে বিংশ ফেলে নেমে গেছি একবিংশের দিকে।
এখনো শেষ হয়নি শূন্য ও ভনিতার অনুসন্ধান, তবে শৈশবের আলপথে
যতবার ছুটি মনে হয়— দুপাশে আদিগন্ত ধানখেতে ঠাকুমার আঁচল বিছানো,
আর আমার পায়ের পাতা যেন ঠাকুরদার শৈশব।

 

ঘড়ি

বন্ধ হাতঘড়িটার দিকে তাকালেই মনে পড়ে যায় তোমার মুখ,
কতদিন কথা বন্ধ, কতদিন সারানো হয়নি আমাদের সম্পর্কের কাঁটা,
থেমে থাকা ঘন্টা মিনিটের কাঁটার মত আমরাও থেমে আছি
বাসস্ট্যান্ডে সেই ‘আসি’ বলে যাওয়া বিকেল ঘড়িতে...
সারাবো সারাবো ভেবে হেঁটে গেছি
ঘড়ির দোকানের পাশ দিয়ে কতবার, কেমন হয়, যদি
ঘড়ির দোকানে ঘড়ির বদলে তোমাকে দিয়ে আসি?

 

চোখ

কলকল করে নামছে জল,
পায়ের তলায় টান
পিছলে যাই, গড়িয়ে যাই, বয়ে যাই
যতক্ষণ না অব্দি একটা বিস্তৃত গমখেত আসে,
খেতের নাম নূতন, খেতের বাড়ি রোদ্দুরপুর
খেতের বন্ধু কিচিরমিচির,
পলাশের ভাঙা মৃদু ঠোঁটের পাশে উল্টে পড়ে আছে বসন্ত,
উপরে আকাশের মত হ্যাঁ করে আছে আকাশ।
তার চোখ নিয়ে আমার বিশেষ কিছু বলার নেই
শুধু তাকালে মনে হয়—
শরীরে চোখ ছাড়া আর কিছু নেই
চোখের ভিতরে একটা ঝর্ণা, কলকল করে নামছে জল,
পায়ের তলায় টান... গমখেত... রোদ্দুরপুর
পলাশের ভাঙা মৃদু ঠোঁটের পাশে উল্টে পড়ে আছে বসন্ত,
উপরে আকাশের মত হ্যাঁ করে আছে আকাশ,
দাও ঐ চোখ,
একটু স্বপ্ন দেখি, একটু আকাশ দেখি।

 

তোমাকে পেরোতে

ব্রিজ পেরিয়ে স্টেশন, স্টেশন পেরিয়ে মাঠ,
মাঠ পেরিয়ে জঙ্গল, জঙ্গল পেরিয়ে সরু রাস্তা,
রাস্তা পেরিয়ে শ্মশান, শ্মশান পেরিয়ে অন্ধকার,
অন্ধকার পেরিয়ে ভোর, ভোর পেরিয়ে তুমি,
শুধু,
তোমাকে পেরোতে দু-চারটে জীবন পেরিয়ে যায়।

 

বড়ে গুলাম আলি

তাকিয়ে থাকব সারাদিন, ছোঁব না
হৃদয়ের বিষফল রাখব মাটির চরণে
ব্যথা নীলকন্ঠ ফুল হয়ে
সারারাত কাঁপবে মুমূর্ষু মাটির কলসি,
ছোঁব না, শুধু চোখ বুজে তাকিয়ে থাকব... 

 

কান্না

কোনও কান্নায় ভাসছে গাছ ছায়াছায়া রোদনদীজল
কোনও কান্নায় অচৈতন্য হসপিটাল ক্লোরোফর্মের গন্ধ
কোনও কান্নায় দোকান পেতেছে গরম চা, সস্তা বিস্কুট
কোনও কান্নার থালায় ধবধবে সাদা ভাতের জ্যোৎস্না
কোনও কান্না ভাঙছে মা্টির কলসি, ছাই তুলসীপাতা
কোনও কান্নায় বেঁহুশ থ্রু ট্রেন, স্মৃতির টর্চ হাতে সিগনালম্যান
কোনও কান্নায় বেঢপ জ্যৈষ্ঠ, তীব্র আয়না ফাটার শব্দ
কোনও কান্নার ভিতরে কান্নার ভিতরে কান্না, মানুষ
যখন প্রকৃত কাঁদে, কান্না শুধু কান্না শুধু কান্না শুধু কান্নাই।

 

মাটির কলসি

একটা মাটির কলসির অনেকরকম শব্দ আছে
জল ভরা থাকলে এক রকমের শব্দ,
খালি থাকলে আরেক রকমের শব্দ,
অর্ধেক ভরা অবস্থায় অন্য রকম,
দাদুর খুব শ্বাসকষ্ট, মা দৌড়ে আসতে গিয়ে
পায়ে লেগে ভেঙে গেল বাড়ির সবচেয়ে পুরানো কলসিটা
গলগল করে জল... গোটা ঘরমর...যেন এই সেদিন
মাটির কলসি ভাঙার শব্দে প্রতিবার আমার
শৈশবের একান্নবর্তী আয়না ভেঙে যায়।

 

জল

চোখের জলের সঙ্গে কান্নার অনেকটা তফাত
ঝড়ের পর পাতাগুলি কান্না, আর
কোনদিন ছুঁতে পারবে না জেনেও
একটা নির্জন হাইওয়ের দুপাশে
আজন্ম মুখোমুখি দাঁড়ানো,
একে অপরের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে থাকা
দুটো গাছ আসলে চোখের জল।

 

দাম্পত্য

ফেরার সময় এক-একদিন ভুল করে নিজের স্টেশনে
নামতে ভুলে যাই, আমার বদলে আমার মতোই দেখতে
অন্য কেউ যায় আমার বাড়ি,
গল্প করে বৌ এর সঙ্গে, খায় একসঙ্গে, থাকে, শোয়।
আমিও অন্য বাড়িতে রাত কাটিয়ে
পরদিন সকালে বাড়ি ফিরে আসি, দুজনেই
খুব লজ্জায় সাবধানে ভয়ে ভয়ে তাকাই
একে অপরের দিকে, পাছে ধরা পড়ে যাই।
এভাবে প্রায়শই নিজের স্টেশনে না নেমে
অন্য কোন অজানা স্টেশনে নেমে যাই,
যাই অন্য কারো বাড়ি, আর আমার বদলে
ঠিক আমার মতই কেউ যায় আমার বাড়ি।
তারপর একদিন অজান্তে নতুন স্টেশন ভেবে
ভুল করে নিজের স্টেশনেই নেমে যাই,
কাঁচুমাচু নিচু মুখে নিজের বাড়ির দিকে যাই,
দরজা খুলে দেখি বউ এর মত দেখতে অন্য কেউ,
অন্য কেউ ঠিক বউ এর মত দেখতে,
খুব চেনা লাগে একে অপরকে...
খুব অচেনা, নতুন শিহরণ, আবার
আমরা গভীর প্রেমে পড়ে যাই,
সারারাত, ভোর সকাল অব্দি আমরা
একটা নতুন গল্প হয়ে যাই, আচমকা
জমে ক্ষীর হয়ে ওঠে আমাদের দাম্পত্য জীবন।

মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...