একক কবিতা সন্ধ্যা ।। শাহীনুল ইসলাম

shahinul

শাহীনুল ইসলাম এর এক গুচ্ছ কবিতা 

 

 

 

মায়াজাল

 

দিনরাত্রির দেহখণ্ডে সূর্য মায়াজাল 
সূর্যে অন্ধকার অদৃশ্য, কী অদ্ভুত, দৃশ্য নিঃস্ব 
দিন ফুরালে অসম্ভব সুন্দর, রাত্রিদূত পাখির কন্ঠ। 

ঋতুতে ঋতুর অমিল সময়ের যোগফল গভীর।

তুমি হাসলে আমি কৌতূহল , অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল
হাসি কান্না, জীবন অভিনয়, সত্যমিথ্যা হৈচৈ বর্ণনা।  
রঙ বিরহের মিথ্যে না! 

আমি উড়তে চাই ঘুরতে চাই তোমার দেহমন,  
আকাশ জমিন, খেতে চাই ইচ্ছের বিরুদ্ধে তোমায়।

বিচ্ছেদে জীবন্ত প্রেম, উল্লাসে মৃত
কে বলে ভালোবাসা বন্ধন!
তুমি ভালো না বাসলে 
একফোঁটা জল দিবে?
আমি রাত্রি শেষে... দিনকে দেবো একবিন্দু শিশির...

 

 

শীতকালীন চাওয়া 

 

হাত জমে যাচ্ছে বরফময় সু'গন্ধ নেয়ার নাক'সহ
কোথাও নেই একটুকরো ফাঁক, ধোঁয়াধোঁয়া সকালময় দুপুর

শীতের ঠোঁট ফেটে বেরিয়ে আসছে গুচ্ছ গুচ্ছ কুয়াশা 
এমন কাঁপুনি অভিযানে ভীষণ ইচ্ছে তোমাকে 

তুমি কী একটান সিগারেট হবে? 
আমি মনের আবেগ পুড়িয়ে নিব শীতকালীন উষ্ণতা ...

 

এককাপ রঙ চা

সে ফুঁসে উঠেছিল, তার কাঁপাকাঁপা ঠোঁটে এঁকেছিলাম চুমু 
কামের আবদার ছিলনা একচুমুক 

তখন সিগারেটের গন্ধ ছিলনা, ছিলনা তেমন কোন ইচ্ছে
সে হয়ত গলে গেছে তাও —
যেমন লালচে চাতে লেবু চিপে চিনি গলিয়ে খায় রঙ-চা

চায়ের কাপে কুয়াশা উঠে ঠোঁটের মতন চুমুকে চুমুকে
দেহতত্ত্বের চিনি গলিয়ে করে দেহপাঠ —
প্রেমতত্বের উষ্ণকলে ফিঁকে উঠে আবেগ শরীরের অনুভূতি...

 

 

চোখের সঙ্গম

 

অবশেষে দেখা হলো —
অনেক দূর থেকে সে আড়ালে আমি প্রকাশ্যে
গভীর কুয়াশায় যেমন ভোরের রোদ্দুর পায়না মাটির স্পর্শ

ঠিক তেমন
কোন কথা হল না, চোখে চোখে সঙ্গম হল দীর্ঘক্ষণ 
তাঁর হাতের লেখাময় কিছু শব্দ নিয়ে প্রকাশ্য ছুটলাম

তারপর উড়ু উড়ু কথা দীর্ঘদিন
কেমন আছো 
কী খেলে 
ঘুম কেমন হলো 
পছন্দ অপছন্দ

এভাবে কথা বলতে বলতে বিজয়ের আনন্দ নিয়ে ঢুকে গেলাম, এক'শ মাইল পথ অতিক্রম করে তাঁর ঠোঁটে —

প্রশ্ন জাগল তুমুল হাসির কারুকার্যে দৃষ্টিখোর রূপ 
কীভাবে সাজালো ঈশ্বর ...

 

 

পৃথিবীর রূপ

 

বালিশের তলে একগুচ্ছ চিন্তা রেখেছিলাম। 

বালিশ উল্টাতেই বেরিয়ে এল গন্ধ
গন্ধ টানতে টানতে কখন যে জন্ম নিল প্রশ্নোত্তর 
পৃথিবী কী, কী তার পরিচয় —

পুরুষ বলতে বুঝলাম পৃথিবী এবং নারী তার সৌন্দর্য ...

#কবিতা 

কবিতা তো শীতকালের গ্রামের দুর্বাঘাস
সূর্যের লুকোচুরি 
সকালবেলার গাছকাটা জলপোড়ানো মিষ্টি পিঠা 
প্রেমিকার দুঃসাহসী চোখ

কুন্ডলীর অলস আসর পোড়া চাদরের গন্ধ
লেপের তলে রেখে আসা কবি আল-মাহমুদের বই ...

 

 

বাসর

 

তারপর আকাশ ঘুমিয়ে যাচ্ছে — 
তালাবদ্ধ ঠোঁটে ফোটেনি কোন শব্দ
রাত ছুঁয়েছে তার দুচোখ 
আমার চোখে ভোরময় লোভ 
যেন ভয় ভয় ইচ্ছাদর মন —
সংকোচ ভেঙে চুমুর উক্তি ছেপেছি তার ওষ্ঠে
কী ভীষণ বিরক্তিময় হাতে খামচে ধরেছে চুল 
নাভিমূল
বুক
নদী মুখে কম্পন ঢেউ ঢেউ ইচ্ছাজল
অনাবাদি ভূমিতে চালাচ্ছি তৃষ্ণার্ত লাঙল —
পৃথিবীর সমস্ত সুখ তার ভূমিতে ঢেলে করেছি সবুজময় কাব্য ...

 

 

সূর্য 

 

কুয়াশা ফাঁক করেও তোমাকে দেখা যাচ্ছে না
কিভাবে তোমার ঠোঁটে নাইদিনের কবিতা লিখবো 

 

 

চোখের উষ্ণতা

 

এমনি এক শীতকালে ভোরের উঠান হেঁটে 
তুমি আসতে আগুনের উষ্ণতা নিতে 
আমিও শীতের বাজ ভেঙে তরতরে আসতাম তাপ কুড়াতে

তুমি বলতে —
এসছো বেশ, তবে কোলাহল নষ্ট করো না যেন 
আমাদের শৃঙ্খলা চোখের তালুতে ভাঙতে থাকতো

একবার আগুন ছুঁয়েছিল আমার গতর
তার তীব্রতা বুঝতে পারিনি —
তোমার চোখের তীব্রতায় পুরোপুরি দগ্ধছিলাম ...

 

 

মনের জ্বর

 

শুধু দেহের নয় — মনেও জ্বর হয় 

প্রিয়ার ঠোঁটের হালকা হালকা হাসি আর তীক্ষ্ণ চোখের 'ভালোবাসা জলপট্টি ট্যাবলেট ...

 

 

আফসোস

 

হাত ধরে উঠেছি পা'য়ে ঠেলা রিকশায়
চালকের কন্ঠে প্রেমের গান
আমার তোমার অস্থিরতা আর শরীরের ঘাম যায় 

তোমার ঠোঁটে পটেটো চিপস্ আমার জ্বলন্ত সিগারেট
এতো কাছাকাছি তবু — মাঝখানে বড় আফসোস ...

 

তখন মধ্যরাত

 

তখন মধ্যরাত তুমি গভীর ঘুমে নিস্তেজ
ছেপেছি প্রথম চুমু 
একলাইনের রাত্রি হাসছে ইউক্যালিপ্টাস গাছের মাথায় 

ঠোঁট কাঁপছে ঘুমঘুম কৌতূহলী চোখ —
ফিঁকে উঠা শরীরে আবেগ ঝরে পরছে এককালীন ভয়ে

নরম নরম শব্দে ইচ্ছেরা ডাকছে আলোকলতার কাম
কোথায় পাব আলোকলতার মূল —
চমকে উঠা অন্ধকার হাতদুটি শক্ত করে ধরতে আগুন
এখন বসন্তকাল বৃক্ষেরা ঝরাছে সমস্ত পাতা নতুনত্বে
আমি বধির মরা ভেঙেছি রাত্রি একবার লুন্ঠিত হবার ...

 

প্রথম প্রেম

 

ওর ঠোঁটের রঙ লাল সবুজ, কপালে বাসন্তী রঙের টিপ
ঢাক ঢোলের ছাপা শাড়ি ধবধবে সাদা
আমার পাঞ্জাবী ভিঁজে যাচ্ছে নতুন প্রেমের একটুকরো ভয়ে

কারণ —
আমাদের প্রথম প্রেম, প্রথম বৈশাখ 
মেলা অব্দি না যেতেই প্রথম যৌবনী হাওয়ায় ভেঙেচুরে ঝড়

পথের পাশেই মানুষশূন্য টংঘর 
ওর লন্ডভন্ড পুরো শরীরে ফিকে উঠেছে মধ্যদেহ 
দুই ঘন্টা পর স্তব্ধ মাঠঘাট শূন্য আকাশ নীল

বাড়িতে পাঞ্জাবী খুলছি, আয়না চেয়ে চেয়ে দেখছে নগ্ন শরীর

মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...