logo corona

আত্মহননের কথারা ।। শ্রীজিৎ জানা

১.
স্টেথোস্কোপ ঈশ্বর। মন্দিরের অন্দরে তিনি শুধুই প্রস্তরময় অবয়ব। কত না সহজ ভাবনার নিজেদের মতো করে সাজিয়ে নেওয়া সমীকরণ। গ্রহে উদ্ভূত বর্তমান মারণ ব্যাধির কবলে মৃত্যুর প্রহর গুনছে মানব সভ্যতা। এমন আকাল সময়ে ঈশ্বর আর স্টেথোস্কোপের নিক্তি ধরে তুল্যমূল্য ওজন মাপছে মানুষ। এমনকি মানুষের সরল সিন্ধান্ত যেহেতু মন্দির বন্ধ, মসজিদ বন্ধ, গীর্জা বন্ধ তার মানে দেবালয় বা ঈশ্বর - আল্লা- যীশু কোনো কম্মের না। বিপদে যে পাশে নেই মহান ভাবার প্রশ্নই থাকে না। তার মানে মানুষের চাহিদা মতো ঈশ্বরের সাড়া দেওয়া উচিত। মানে বাঙলা সিনেমার বড় বাড়ির চাকর চরিত্র। হুকুম তামিল করবে। মধ্যাকথা খাল কেটে কুমির আনবে মানুষ। রক্ষা করবেন ঈশ্বর। দেশি খেয়ে লিভার পচাবে জগেন, আর সারবে নটু ডাক্তার। যার যা কম্ম। আসলে বেশিরভাগ মানুষেরর ঈশ্বর ভাবনা অন্দরের প্রস্তরমূর্তি আর প্রণামী বাক্সের মাঝখানে আটকে থাকে। দিতে পারলে ভগবান নইলে শয়তান। ফলে মাঝে মাঝে ঈশ্বরের মতো স্টেথোস্কোপও মানুষের হাতে বেধড়ক শায়েস্তা হন। আর বড় বড় নার্সিংহোমের অন্দরে বিরাজ করেন দেবদেবীর মর্মরমূর্তি তৎসহ প্রণামী বাক্স। স্টেথোস্কোপ আর ঈশ্বরের ওজনে বড্ড গরমিল হয়ে যায়।

২.
দেবালয় মানেই প্রাপ্তিযোগ। তিনি দাতা- কল্পতরু। সব কলঙ্ক তাঁর চরণে। সব অপরাধ। সব অকর্ম কুকর্ম। মানুষ কেবল ঈশ্বরের কাছে পেতে চায় ননি মাখন। শুধুই ভাল। মানুষের কাছে বিরাট এক ইনভেস্টমেন্টের কেন্দ্র দেবালয়। নানা উপাচারের নৈবেদ্য। মোটা অঙ্কের করমুক্ত দানদক্ষিনা। ফলে কিছু তো আশা থাকতেই পারে। নইলে ইনভেস্ট কেন? যেখানে বিনিয়োগ সেখানেই লাভের গণিতচর্চা। দিলুম কিন্তু পেলুম না। অতএব তিনি বধির। তিনি অন্ধ। তিনি পাষাণহৃদয়। প্রশ্ন হল কী দিলেন? যা দিয়েছেন তার ভিতর বাহির " তিনি মেলাবেন তিনি মেলাবেন"। ঈশ্বর মানুষের মুখাপ্রেক্ষী নয়। মানুষের অধস্তন নয়। ক্ষুদ্র জ্ঞানে অসীমকে বাঁধতে চেয়েছে মানুষ সীমায়িত গগনচুম্বী দেউলে। সেখানেই মানুষের স্বার্থ প্রকাশ।সেখানেই দেবালয় আর প্রণামী বাক্সের মাঝে একদলের দাপাদাপি। কতকটা হাসপাতাল আর মুমূর্ষু রোগীর মাঝখানে দালালচক্র।

৩.
মানুষ কোনোদিন নিজেকে ঈশ্বর করে তুলতে চায় নি। ঘরকে দেবালয় করে গড়তে চায়নি। তার কর্মে, বাক্য প্রয়োগে কোনদিন ঈশ্বরত্ব প্রকাশ পায় নি। তার আচার আচরণ, তার যাপন, তার যৌনতা, তার আকাঙ্খা, প্রকৃতির প্রতি ব্যবহার, প্রতিটি জীবের প্রতি সহমর্মিতা, তার সুখানুভূতি, তার শান্তি অন্বেষণ- কোনখানেই ঈশ্বরীয় ভাব ও ভাবনার কণামাত্র রাখেনি। বেশিরভাগ মানুষের কাছে ঈশ্বর মানে আকার-নিরাকারের দড়িটানাটানি। আবার ঈশ্বর যেহেতু নিয়ন্তা অতএব মানুষ নিশ্চন্ত। যেহেতু তাঁর জন্য মন্দির মসজিদ গড়েছি বিনিময়ে তিনি দেখবেন। অতএব গ্রহের উপর অকথ্য নিপীড়ন। গ্রহের ভারসাম্য রক্ষায় মানুষের কোন দায়ভার নেই। আর এভাবেই সভ্যতা তার মৃত্যুর পথ প্রশস্ত করেছে। মানুষের আজকের শিক্ষা শুধু গ্রহেটিকে থাকার কৌশল, বেঁচে ও বাঁচাতে শেখার আচরণ নয়।

৪.
অপরাধ লুকোতে চায় মানুষ। গ্রহকে ক্রমে বসবাসের অযোগ্য করে তোলার অতুলকীর্তির হকদার তো হোমোসেপিয়েন্স। জলে স্থলে অন্তরীক্ষে প্রতিনিয়ত বিষ মিশিয়ে দিচ্ছে মানুষ। কয়েকলক্ষ প্রাণের উপর উন্নততর লঘুমস্তিষ্কের দাপটে মাৎস্যন্যায় চালাচ্ছে মনুর পুত্র সন্তান । কর্মের একটা ফল থাকে। একদা এদেশ কর্মফল মানতেন। আজকাল মানা মানির বালাই নেই। যাবৎ জীবেৎ সুখং জীবেৎ। বিজ্ঞান যে বলেন ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া হয়! ও তা যদি বলে থাকে থাকুক। কোনো চাপ নেই। মানুষ বিন্দাস বাঁচতে চায়। মন্থনে অমৃত আর গরল দুই ওঠে। কিন্তুু বিষ জ্বলুনি সহ্য করবে কে? সভত্যার ভাববার ফুরসত নেই। শুধু কদম কদম বাড়ায়ে যা...। জীবন শৈলির চুড়ান্ত আধুনিক চাহিদা, উগ্র ভোগবাদ, মুনাফালাভের মনোবৃত্তি, যুদ্ধব্যবসা এবং ক্ষণিক সুখের বাসনা গ্রহের সমস্ত প্রাণ রস নিঙড়ে নিচ্ছে মানুষ আখ মাড়াই যন্ত্রের মতো কোরে। চড়ুইয়ের সংসার ভেঙে দিয়েছে। প্রজাপতিদের ডানায় লেগেছে বারুদ। ডলফিনের মৃত্যুতে কেউ কাঁদেনা। কত নদীর শুকনো হয়ে যাওয়ার ব্যথা অন্তর স্পর্শ করেনি। কৃষ্ণসার বন্দুকের নলের ডগার সামনে ভয় নিয়ে টিকে আছে। ডোডো পাখির লুপ্ত হবার পিছনে মানুষেরই তো লালসা ছিল। আমাজন পুড়িয়েছে কারা? জঙ্গলের নিরপরাধ বন্যপ্রাণদের আর্তনাদ, ঝলসে পোড়ার যন্ত্রণাদগ্ধ হাহাকার অভিশাপ হয়ে ফিরলে অবাক হবে কি? দেবালয় নয় দায় মানুষের। পাশের বাড়ির নিরন্ন থালায় যে মানুষ দুমুঠো অন্ন তুলে দ্যায় নি, শিশুর অন্নে বিষ মেশায়, প্রকৃতির কাছে নত হতে শেখেনি দেবালয়ের দিকে তর্জনী তোলার আগে মানুষ তার অতিমানবিক প্রবৃত্তিকে সংযত করার অভ্যাস রপ্ত করুক।
দেবালয়ে যিনি, মুমূর্ষু যিনি স্টেথোস্কোপ যিনি- তাঁরা হাতি নারায়ণ- মাহুত নারায়ণ।

৫.
লোভ ভোগদখল চায়। অহংকারের সিন্দুকে মৃত্যুর এপিটাফ। স্বার্থের গণিতে সামনের সুজনও প্রতিপক্ষ। চকমকির মধ্যে আগুন ছিল। যেভাবে কাঠে থাকে। আগুন সৃষ্টি। চকমকির ঘর্ষণে যে ফুলকির প্রকাশ, সেই ঘর্ষণ কৌশল বিজ্ঞান। ঈশ্বর ও বিজ্ঞান কখনো প্রতিপক্ষ নয়। বিজ্ঞান ও ঈশ্বর কখনো প্রতিহিংসাপরায়ণ নয়। আইনস্টাইন প্রতি রবিবার গীর্জায় যেতেন । কালাম সাহেব নিয়মিত কোরাণ, গীতা পাঠ করতেন। ভাসা ভাসা ধারণা নিয়ে বিজ্ঞান ও ঈশ্বরের মাঝে বৈরিতা তৈরি করা মূর্খামি। সভ্যতার পরিপন্থী। ক্ষুদ্র স্বার্থে বিজ্ঞান আর ঈশ্বরের মাঝে থাকে একদল ফড়ে দালাল। আর যেখানেই স্বার্থ সেখানেই বিবাদ। সেখনেই বিষময় আবহ। মানুষ নিজের গভীরে ডুব দিতে শিখুক। সুখ না শান্তি, উল্লাস নাকি আনন্দ কোন অমৃত পেতে চায় মানুষ! লোভ ও স্বার্থের মোহে রাস্তার পাথর হয় শালগ্রাম শিলা। স্বার্থ ফুরালে স্টেথোস্কোপও হয়ে যায় শ্বাসরোধের দড়ি।

একক কবিতা সন্ধ্যা



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...