একক কবিতা সন্ধ্যা ।। শুভদীপ মাইতি  

IMG 20230428 WA0002

শুভদীপ মাইতি-র এক গুচ্ছ কবিতা 

 
 
পল্লিকথা
 
.
 
তর্ককথা শেষ হলে ফিরে আসে শষ্যময় গ্রাম
সবুজ প্রান্তর জুড়ে জেগে ওঠে মোহিনী উৎসব
দৈনন্দিন যাপন চিত্রে মাঙ্গলিক ধূপ-ধূনো ঘ্রাণ
খিড়কি খোলা কাঁচা ঘরে দরজায় শ্রীলক্ষ্মীচরণ।
 
গ্রামময় খাল বিল, চুনোপুঁটি, শামুক, শ্বাপদ
শষ্যক্ষেতে ফিরে আসে সূর্য স্নানে বিমুগ্ধ ঈশ্বর।
 
 
২.
 
 
পল্লির এঁদো কথা থেকে উঠে আসে ব্রহ্মকমল
পুকুর ঘাটে ভিজে শরীরে উষ্ণতা ছড়ায় চাষী বউ
সমস্ত রাত জুড়ে জোনাকিরা। আত্মদহন কাল
শয্যাতলে অপেক্ষারত বলিষ্ঠ লাঙলের ফলা
 
সমূহ রাত বর্ষণ মুখর এবং আঁশটে ঘ্রাণ
শেষ রাতে দৈবাৎ ডেকে ওঠে ক্ষুধার্ত শৃগাল।
 
 
যে কথা রেখে এসেছে বালক : জন্মান্তর ― ১৭
 
প্রতিটি সন্ধে মানে, বুকের ভেতর বয়ে যাওয়া শীতল বাতাস। চারিয়ে যাচ্ছে দুব্বো।
মাঝরাতে সমস্ত শরীর জুড়ে দাহ। একটি ভাঙা কম্পাস। একশ তিন ডিগ্রি জ্বর।
নগরবাউলের সুর হাত বুলিয়ে দেয় কপালে। আমি ভাবি প্রিয় আমার বসে আছে মাথার কাছেই। আমি ভুল বকতে বকতে, প্রিয়কে খুঁজতে থাকি। হারিয়ে যাই। অতঃপর ঘুম।
কী ভীষণ সেই ঘুম। গৌতম দিঘির কালো জলের মতো গভীর সেই ঘুম।
স্বপ্নে দেখছি পাড়ার ছদ্মবেশে আমায় সাজিয়ে দিচ্ছো তুমি।
আমি যিশুর মতো ছড়িয়ে রেখেছি হাত, কতো সাবলীল
তুমি পেরেক ঠুকছো হাত, বুক,কপালে, গলায়।
অসহ্য যন্ত্রণা আমার শরীর জুড়ে। আমি তবুও মুখে কিচ্ছুটি বলছিনা।
মনে মনে শুধু বললাম, হে প্রভু ওকে ক্ষমা করো।
 
দেবায়ুষ আজ জিজ্ঞেস করলো 'বাবা জাতিস্মর মানে কি'?
আমি কিছু বলার আগেই, কোন এক অদৃশ্য ঠোঁট ফিসফিস আমার কানে বললো, 
জাতিস্মর মানে― গুঁড়ো জোনাকি আলো, চোখে ছুঁইয়ে গেছেন ঈশ্বর।
 
 
 
 
বর্ণগ্রাম
   
সহসা মুঠো থেকে দুই ফোঁটা বাংলা বর্ণ  
সন্ধ্যার টিলা পাথরে গড়িয়ে নামল। 
শালগাছ, মোরগলড়াই কিংবা মালতি টুডু
উপুড় হচ্ছে হাঁড়িয়ার ঠেকে।  
তাদের নাভিমূলে আমার মহাবিশ্ব–  
অলৌকিক ভ্রমণ কাহিনি লিখে রাখছে।
সোনাঝুরিতলার তীরন্দাজ বউ  
আমার শান্ত তাকিয়ে থাকার নিচে  
দাঁতে কাটছে মিথ্যে শাড়ির আঁচল।  
 
হে ওদের ডেঁয়ো পিঁপড়ের ডিম  
হে আমার কালি কাঁচের দোয়াত  
হে আমাদের ফুটো অর্থনীতি 
 
পাখির ঠোঁটে যখন চুঁইয়ে নামছে সকাল  
ভেতরে ভেতরে ভাঙার শব্দ ছাপিয়ে মাদল।  
 
বিভূতিবাবুর আদিবাসী পাড়া জেগে উঠছে।
 
 
খাদ― ৮
 
 ভ্রমণ কথা চিরহরিৎ, প্রেসার কমায় ' অ্যাম্লোডিপিন' 
কলম শুধুই বাঁক নিচ্ছে, কাব্যচর্চা 'ভি.আর.এস.'-এ। 
বৃদ্ধাশ্রমে রুপকথারা, ফ্ল্যাশব্যাকে  যায় জানলার ধার 
বৃষ্টি ভীষণ চোখের কোনে, নিম্নচাপটা বুকের ভেতর।
 
কাঁকড়া মাটি, ঝাউয়ের বাগান, লবনাক্ত আমার শহর 
ম্যাজিক ভ্যানে শিল্প ঢোকে, পাড়ায় পাড়ায় কাজু শ্রমিক।
 
জিরান কাটে ভাঙছে শরীর, মাইক্রোচিপে ইভ ও আদম; 
বৃষ্টি এখন চোখের কোনে, নিম্নচাপটা বুকের ভেতর।
 
প্রস্তরময় জীবন আমার, ধ্বস নেমেছে বর্ষাকালে 
'অ্যাস্থমা পেশেন্ট, 'স্যাফোকেশন' বেঁচে আছি 'অ্যাস্থালিন'-এ। 
উঠতে গিয়ে ফের পড়েছি বাৎসায়নের পিছল খাদে; 
বৃষ্টি যখন চোখের কোনে, নিম্নচাপটা বুকের ভেতর।
 
 
খাদ― ১৪
   
 
 আঙুলে সরস্বতী নাচালেই তুমি কবি। তবে পুরুষ নও। 
সংগমে হেরে যাওয়া ভোঁতা বেয়োনেট। 
যে শব্দবর্ণ কবিকে প্রবাসী করেছে, তার প্রতিটি বাঁকে খই ফুটছে। 
আতপ চালে খুচরো পয়সা, পান সুপোরি রেখেছি নিকানো উঠোনে।
 
মহাভারতের প্রসিদ্ধি নিয়ে অম্বরেশ্বর মন্দির। ডাবজল ও ভক্তবৃন্দ। 
তবুও এই শীতে প্রচণ্ড শুষ্কতায় অম্বরনাথের হিলস্টেশন। 
প্রতি রাতে সম্মোহন। প্রতি রাতে উন্মুক্ত খাদ পিচ্ছিল। 
প্রতি রাতে পাহাড় ভেসে যাচ্ছে। ভেসে যাচ্ছে খাদ। 
অন্ধকার সেলাই করে জোনাকি আলো― চিকচিক ঈশ্বর-কনা।
 
এই সেই নক্ষত্রযোগ; প্রতিটি পাথরে সংযম অগাধ বিশ্বাস। আমি দেখি মায়ামৃগ, অশরীরি নাভি উপত্যকা। 
নতজানু ছিটেবেড়া টপকে পোয়াতির আলতা ধোয়া ঘাট এবং 
খরগোশের গর্ত।
 
খাদের ধার ঘেঁষে দাঁড়াতেই, কবিকে ঘিরে ধরে প্রান্তিক শব্দব্রহ্ম-,
একতারা বাউল জীবন। অন্যমনস্ক অসমতল প‍রিক্রমা। প্রবাসী শিকড় ছুঁয়ে― 
পাহাড়ি যুবতীর ঝুমচাষ ও পিট ভাইপার।
 
আসলে প্রতিটা খাদ-ই নির্ধারিত। 
আসলে প্রতিটি খাদ-ই লালনগীতি। 
আসলে প্রতিটি খাদ-ই মৃত্যুহীন।
 
 
প্রেম সপ্তাহের কবিতারা
 
 
ক.
 
রোজ ডে
 
যা কিছু বাষ্পীয় ট্রমাটিক ওয়েভ
গভীর ফাটলে। কোমল ত্বক, শরীর জুড়ে 
টাটকা কামিনী গন্ধ।
 
গোলাপ দিবসের অ্যারোমায় ভেসে যাচ্ছে
সমগ্র পৃথিবী।
আমি ভাসছি কাঁকড়া শিল্প, লবনাক্ত ভাটায়।
 
সকাল থেকে সবাই যখন গোলাপ কিনতে ব্যস্ত
একটা গোটা গোলাপের বাগান
কখন যেন তোমার অপেক্ষায় রাত জাগছে।
 
 
খ.
 
প্রপোজ ডে
 
         
খাঁচার ভেতর যে পাখিটা দানা দানা যন্ত্রণায় ডানা ঝাপটাচ্ছে
তার বুকের ভেতর সেলুলয়েড― অনন্ত আকাশ।
 
ভরা বর্ষায় দূর্গাপুর ব্যারেজের উন্মাদ জলরাশি
ভেঙে ফেলতে চাইছে বিপদ সীমা
মিশে যেতে চাইছে দামোদরে।
 
ভালোবাসা এক ইথার কম্পন ও জোনাকি ভেজা শরীর
 
সমস্ত প্রেমিক যখন প্রস্তাবিত নতজানু
আমি তখন ঈশ্বরের কাছে তোমাকে চাইছি।
 
 
গ.
 
চকলেট ডে
 
          
কোন বৃত্তের বহিঃস্হ কৌণিক বিন্দু থেকে বৃত্তের ওপর
দুটি স্পর্শক আঁকা যেতে পারে,
তবুও আমাদের কোন সরলকোণ নেই।
বৃত্তের বাইরে যখন নতুন তোমার সাবলীল ভ্রমণ,
মাঝরাতে একটি কলম তোমাকে লিখে রাখছে।
 
আইভরি কোস্টের কোকো ফার্মে কি ভয়াবহ ডার্ক ফ্যান্টাসি
চাবুকের ক্ষতের মতো দগদগে
শ্রমিক শিশুটির কান্না বাঁচিয়ে একটি উদযাপিত দিন
 
এই এতো ভালো রাখায় ভয়ানক জ্বর,
তোমাকে দেবো বলে একটি না কেনা চকলেট
তোমার উষ্ণতায় গলে গলে যাচ্ছে।
 
 
 
ঘ.
 
টেডি ডে
         
অরণ্য তোমার চিরকাল পছন্দের।
শিকারপর্ব শেষ হতেই, সমস্ত উঠোন জুড়ে ক্ষিদে
যা কিছু সুন্দর, তার সবটাই সত্যি নয় প্রবাসী রমণীটির মতন।
ওহে মায়া প্রবঞ্চক তুমি শিখে নাও, শিখে নাও সূক্ষ্ম তঞ্চকতা।
 
সম্পর্কের উষ্ণতায় পুড়ে যাচ্ছে সম্পর্ক, ঈশ্বরের স্নান ঘর ও নীল নীল।
সেতুর ওপার থেকে আমি শববাহক যান
নিজের মৃতদেহ নিজেই বয়ে বেড়াচ্ছি।
 
অরণ্য তোমার চিরকাল পছন্দের।
শিকারপর্ব শেষ হতেই, সমস্ত উঠোন জুড়ে সরে যাচ্ছে ভ্রম
 
আসলে রুজভেল্ট ভাবতেই পারেননি
আগলে রাখার একটি দিন তিনি উপহার দিচ্ছেন।
 
 
ঙ.
 
প্রমিস ডে
          
যারা ছেড়ে যায়, তারা ভালো থাকে।
পেছনে পড়ে থাকে ঝাপসা দৃষ্টি, দেহজ মোচড়।
বিচ্ছেদ একটি শূন্যতা ও পাললিক শিলা,
প্রতি মুহূর্তের অনুভবে বাড়তে থাকা ক্ষত।
যারা একা ফেলে রেখে চলে যায়, তারা সত্যিই ভালো থাকে,
পেছনে পুড়তে থাকা মানুষটি কেবল ধূপ হয়ে যায়।
সমগ্র উপত্যকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ঘ্রাণ
প্রতিদিন শ্মশানের সামনে থেকে ঘুরে আসে যে ছেলেটি
সে জানে এই রেডিয়েশয়ন, এই কেমোথেরাপি
কেউ কথা রাখবেনা।
 
আসলে প্রতিটি প্রতিশ্রুতিই
কথা দিয়ে কথা না রাখার অ্যাবস্ট্রাক্ট ফর্ম।
 
 
চ.
 
হাগ ডে
 
        
গৌতম দিঘির পুরনো পাড়ে গতজন্মের এক কিশোরী
প্রেমিকের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে।
আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে জন্মান্তরের শিকড়।
 
খসে পড়া পালকের মতো, সমস্ত রাত্রি জুড়ে
তোমার স্মৃতিযাপন ও  অ্যানাস্থেশিয়া।
জড়িয়ে থাকা আসলে শ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত,
আরও কাছাকাছি ঈশ্বরী ও আমি
সমস্ত প্রশ্বাসে গভীর অনুভব নিয়ে ছিঁড়ে দিচ্ছে রোগ
 
পৃথিবীর ওইপ্রান্তে যখন তোমার ড্রামাটিক উচ্ছ্বাস
এইপ্রান্তে আমার বাম কাঁধে যেন মাথা রেখে তুমিই শুয়ে আছো।
 
 
ছ.
 
কিস ডে
         
সূর্য ওঠার মুহূর্তে রসুলপুর নদীতে স্নান সেরে
কাল্পনিক চুম্বন এঁকে দিচ্ছি
আমাদের না হওয়া ছেলে মেয়েদের কপালে।
এই লাইটহাউস, কপালকুন্ডলা মন্দির, এই বাঁকিপুট সৈকত
আমার প্রতিটি শূন্যস্থান জুড়ে লবনাক্ত হাওয়া।
ভালোবাসার শব্দরা হাজার জোনাকির মতো মাঝরাতে
টুপটাপ ঝরে পড়ছে শরীরে।
 
বঙ্গোপসাগরীয় উপকূলের মফস্বলে এক প্রেমিক পাগল
প্রতিটি মুহূর্তে শুধুমাত্র ভেঙে যাচ্ছে
শরীর জুড়ে স্পষ্ট হচ্ছে দাগ।
 
এই প্যাশনেট চুম্বনকারী কিসের জাতক তুমি জানলেনা
তবে প্রতিটি জাতকের চুম্বনের স্টাইল আলাদা আলাদা,
তা তোমার অজানা নয়
কর্কট রাশির অনুজীব যখন হাত পা ছড়াচ্ছে ফুসফুসে
একটি অযাচিত মসৃণ ও সেন্সুয়াল চুম্বন পাঠিয়ে দিলাম টেলিপ্যাথিতে।
 
 
জ.
 
ভ্যালেন্টাইন্স ডে
 
কুয়াশা ঘেরা সকালে, প্রতিটি আমের মুকুল ছুঁয়ে
জেগে উঠছে জন্মান্তর।
আরও বেশি সতেজ হচ্ছে চিকনি শাকের ক্ষেত
আমাদের শ্যামনগর জুড়ে আগুন ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া
সমগ্র রাধানগর সেজে উঠছে খুকুমণি আলতা সিঁদুরে
এসময় গোপনে পাতা ঝরে খুব
গোপনে যে ক্ষরণ তাতে অন্তর্ঘাত, প্রেম।
প্রতিটি রাত্রি ও বালিশ জানে 
কতোটা ভাঙলে বুকে নুনের জারন।
 
আমার আয়ুকাল জুড়ে প্রতিটি মুহূর্ত ছুঁয়ে অসুখ
সবুজ আলোর মতো জ্বলে উঠছো তুমি
মাঝখানে শূন্যতা, সরলবর্গের খাদ
একটি লাবণ্যময় দিনে সবাই যখন পালন করছে প্রেম
আমি দেখি এক বসন্ত দিনে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে
দিব্যি চলে গেল বিষন্ন বালক।
 
 
ভাষা
   
একটি আদিম শিকড়
চারিয়ে যাচ্ছে স্তনের গভীরে।
আরও গভীরে ক্ষিদে,
নবজাতকের কপালে অপত্য স্নেহের মতোন
এই ছুঁয়ে থাকা, এই জড়িয়ে রাখা
হরিণ শিশুটির প্রথম অরণ্য দর্শন
প্রতি লাফে পেরিয়ে যাচ্ছে বাধা।
ধানের শিষে বিন্দু বিন্দু জমে উঠছে দুধ
খন্ডুরুইর আদিবাসী পাড়ায়
একটি ছেলে যখন মায়ের গন্ধ পাচ্ছে বর্ণপরিচয়ে
সমস্ত উঠোন জুড়ে ভেসে উঠছে প্রিয় বর্ণমালা।
 
 
নোনাচাতর
 
প্রিয় মানুষটি নারী হয়ে উঠতে পারেনি বলেই
আমার উপকূল জুড়ে ফুটতে থাকে নুন।
শিমুল গাছের থেকে বারংবার উড়ে যাচ্ছে অতৃপ্ত ইচ্ছেরা
প্রতিটি মৌনতার বাঁকে ঝরে পড়ছে মৃত কথাদের বৃষ্টিপাত
কবি লুকিয়ে রাখেন আকস্মিক স্পর্শ
ভেতরে ভেতরে নিজের ক্ষয়ে যাওয়া।
 
কতো আকরিক ও প্রাচীন জীবাশ্ম ছড়িয়ে থাকে কবির উপকূল জুড়ে
একটি নড়বড়ে সেতু ও টান, টুক করে ভেঙে গেলে
নোনাচাতরের অগ্রভাগে নেমে আসেন ঈশ্বর
 
কবি এবং ঈশ্বর পরস্পরকে বোঝাচ্ছেন
'মহাশয় আপনিই শ্রেষ্ঠ'।
 
 
পথ
 
সাঁকোর ওপারে নদীর সমস্ত স্রোত নতজানু রেখে
লবন হ্রদের দিকে মাথা নিচু করে চলে গেল বিষন্ন বালক
তার চলে যাওয়ার পথে একের পর এক
জেগে উঠছে চর
এই পথে পায়ের স্পর্শ রেখে গেছেন নিত্যানন্দ মহাপ্রভু
হয়তো বহু বছর পর, কবির ছেলে এপথেই
খুঁজতে আসবে কবির জখম ও মৌনতা সমূহ
অপেক্ষা আসলে মহাশূন্য, গরীবের ক্ষিদের মতন
 
পথ এক অনিবার্য গতি। চলতে থাকে, চলতেই থাকে
 
এখন তোমার পোট্রেটের সামনে বসতেই
ফেলে যাওয়া পথের সমস্ত বাঁকে
খই ফুটছে
 
 
কপালকুণ্ডলা
 
শুধুমাত্র ব্রহ্মকে ছুঁতে গিয়ে একটি টাটকা জখম দেগে দিলো
দরিয়াপুরের অক্ষরবৃষ্টি ও বঙ্কিম চাটুজ্যে
বুকের ভেতর যখন মৌসিনরাম
কাঁথি পেটুয়াঘাট ট্রেকারের
প্রতিটি সিটে জেগে উঠছে যত্নহীন মৌনতা
 
দৌলতপুর হসপিটাল পেরোনোর সময় দুচোখে ভ‍রে আসে জল।
বেনারসী শাড়ির ঘোমটায়
বড়পিসিকে প্রথমবার ছেড়ে গেল যে ছেলেটি
শুধুমাত্র মানসিক অসুখ নিয়ে
শুক্র গ্রহটির মতো উপন্যাসের কপালকুণ্ডলায় মিশে যাবে
ভাবতেই পারেনি
অনেক দূরে জলযাত্রায় যে ব্যস্ততা
ইতিহাসের প্রাচীন ছুঁয়ে নির্ভুল কম্পাসের মতো
সংকেত পাঠাচ্ছে লাইট হাউস।
আর আমি উপন্যাসের পাতায় পাতায় তোমাকে ছুঁতে চাইছি
 
তুমি কপালকুণ্ডলা হয়ে ফিরে এসো পিসিমনি
তোমাকে আগলে রাখুক বঙ্কিমচন্দ্রের একান্ত উঠোন
 
 
আশ্রয়
 
রামকুমার মান্নার টেরাকোটার নৌকার মতো
যে চাঁদটি  ছড়িয়ে দিচ্ছে আলো,
তার অন্ধকারের একান্ন পিঠে সংক্রামক ব্যাধির মতো নুন ফুটছে।
এর ঠিক উল্টোদিকে সহজ পাঠের ছবির মতো ভাঙনে আটকে কবি।
তাঁর যাবতীয় হোমিওপ্যাথিক শুশ্রূষায় উপশম দিচ্ছে
ট্রাইচুরেশন ও ভেষজ শাকের ক্ষেত
 
একসময় টান বাড়ে, বিপদসীমা ছুঁয়ে নেয় ক্ষত
ক্ষয়ে যাওয়া পুরুষের নাভি থেকে ক্রমে স্পষ্ট হয়
সন্তানের মুখ ও বিকেলের ছায়াপথ
 
 
গোঁসাই বাড়ি
 
বাঁশঝাড়ের পাশ দিয়ে শিকারি বিড়ালের সন্তর্পণ থাবার মতো
ঝুপ করে নিভে আসে আলো।
গোঁসাই বাড়ির উঠোন জুড়ে নেমে আসে নিজস্ব আচার
 
প্রবাসী রমনীটির গভীর পিছল ছুঁয়ে জেগে ওঠে উত্তাপ
সমস্ত রাত জুড়ে সমর্পণ, জোনাকিদের আত্মদহন কাল
খিচুড়ি ও শাকান্ন ভোগে ডুবে যাচ্ছে পরকীয়া, প্রেম, পদাবলী
জয় গৃহস্থ শূন্যতা, জয় গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু হরিবোল।
এ কি প্রেম ছেয়ে যাচ্ছে পার্থিব জগৎ, গোপনে ভাঙন
তিনি সব জানেন। সবকিছু লিখে গেছেন তিনি
আমাদের অগ্রজ কবি যখন হোঁচট খাচ্ছেন ছায়াপথে
একান্ত উঠোন জুড়ে সে কি মায়া নারায়ণ নারায়ণ
 
 
চৈতন্য
 
আমাদের নুন ও গরম ভাতের গন্ধে
ভীষণ রকম চলকে ওঠে ক্ষিদে।
 
যে কিশোরীটি এই মাত্র শুধু একটি বাক্য পেরিয়ে গেল
আমি তার শ্রীচরণ আগলে রাখি বুকে
চোদ্দমাদলের কথামৃত কানে আসতেই
বুকের ভেতর বেজে উঠলো শ্রীখোল
নিজেকে নিংড়ে দিয়ে যখন কেঁদে উঠছে জন্মান্তর
সমস্ত শীতল ছুঁয়ে ছিটকে যাচ্ছে ঈশ্বরকণা
যে ছেলেটি বাউল হতে চেয়ে গোপনে পুড়িয়েছে ছায়া
তার সমস্ত অসীম ও গভীর ছুঁয়ে শ্রীল প্রভুপাদ
 
 
উদয়ন গ্রাম
 
ব্যারাকপুর উদয়নের সমগ্র জীবন জুড়ে যখন খিদে
একটি সমান্তরাল বাইশ গজে ব্যাট হাতে নেমে এলেন ঈশ্বর
তাঁর সবুজ উত্তরীয় থেকে বেরিয়ে আসছে
নিজস্ব ফসল ও চিকনি শাকের ক্ষেত
 
প্রতিটি লেপ্রোসি কলোনি জুড়ে যে ক্ষয়ে যাওয়া শরীর
তাদের আজন্ম প্রশ্বাসে সন্ধে প্রদীপের মতো উত্তাপ
ছড়িয়ে দিচ্ছে ঈশ্বরের গ্রাম
এসময় আকাশ ভারী হয়ে বৃষ্টি নামে
সমস্ত মাঠ জুড়ে ছড়িয়ে থাকে ছোট ছোট পায়েদের ছাপ
 
 
অতল
 
গিরিয়া শাকের পাতা থেকে যে ফড়িংটি উড়ে গেল এইমাত্র
তার সমস্ত আয়ুকাল জুড়ে নুন আর নুন।
সীমান্তের জুনপুট জুড়ে ফসিলের মতো
ছড়িয়ে ছিটিয়ে অভিমান ও পান্তা শুঁটকির আনন্দ মঙ্গল
 
এসময় হারিয়ে যাওয়া ঠিকানায় শাঁখ বাজছে, আলো ছড়াচ্ছে তুলসি তলার প্রদীপ
সন্তানের গভীরে যে পিতা, তার সমস্ত শরীর জুড়ে আতপ চাল ও ধান-দূর্বো
শেকড় কাটা মাটি থেকে জ্বর
ছড়িয়ে যাচ্ছে ধূপ ধূনোর ঘ্রাণ
এসময় হারিয়ে যাওয়া ঠিকানার
প্রতিটি প্রান্তরে লাফিয়ে পেরোচ্ছে হরিণ।
 
অথচ দেখ, বুকের ভেতর একটি পা বাড়ানো আছে
ডুবে যাওয়া নৌকাটির দিকে

মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...