অনাকাঙ্ক্ষিত ।। প্রিয়াঙ্কা

 

 তর্ক করতে হয়েছে এবং তর্কের শেষে অপ্রিয় হতে হয়েছে এসব বিষয় যখনই উত্থাপন করেছি।  কখনো এতটাই অপ্রিয় হয়েছি, ঘুরে দাঁড়াবার ইচ্ছেটুকুও হারিয়েছি। মাঝে মাঝে একেকটা  কথপোকথন মনে পড়েছে আর মুষড়ে পড়েছি। তারপর হয়তো নিজেকেই আবার উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করেছি। মাঝে মাঝে অভিমান হয়, মনে হয়, থাক, এসব নিয়ে কিছু না বলাই ভালো। আমার কী! কিন্তু সামনে ঘটে গেলে কী করা, আর যদি প্রতিনিয়ত ঘটে এবং ঘটতেই থাকে! বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে।  

যেমন, ‘শ্বশুর বাড়ি গিয়ে থাকব! ফুঃ!’  

নিজের ঔচিত্যবোধ নিয়ে গর্ব করা কোনও পুরুষ ঠিক এইভাবেই বলেছে। এর যথাযথ উত্তরটুকু দেওয়ার পরও তাকে তার জায়গা থেকে একচুলও নড়াতে পারিনি। এটা হয়তো আমার  অক্ষমতা। এসব অক্ষমতা নিয়েই একদিন মরে যাবো। যেসব ব্যাপারগুলোকে অসাম্যের ধ্বজা বলে মনে হয়, সেগুলোকেই স্বাভাবিক এবং যা হওয়া উচিত বলে মনে হয় সেগুলোকে ‘ফেমিনিস্ট’ বলে শুনতে শুনতে মারা যাবো। কেন,ও তো তোমার বাড়ি এসে থাকছে, তাহলে ওর বাড়ি যেতে তোমার আপত্তি কেন? ও তো এসে থাকবেই, সেটাই তো নিয়ম। আমি কেন থাকতে যাবো? আমি যাই, গিয়ে খানিকক্ষণ বসে চলে আসি মাঝে সাঝে। কালে ভদ্রে। কিন্তু শ্বশুর বাড়ি থাকি না বাবা! এমন ভাবেই বলা, যেন যাওয়া এবং থাকাটা খুব লজ্জার। খুব  গ্লানির। অথচ একটি মেয়ে, সে তার বাড়িকে একদিনেই ঋণ শোধ করে দিয়ে পেছনে ফেলে সেই যে চলে আসবে, তারপর থেকে তাকে যতবার যেতে হবে, অনুমতিক্রমেই যেতে হবে। যখন মনে হবে, যদ্দিনের জন্যে মনে হবে যেতে পারবে না। থাকতে পারবে না। এবং তার নিজের বাড়ির নামও একদিনের মাথায় পালটে গিয়ে ‘বাপের বাড়ি’ হয়ে যাবে। এবং তার ‘শ্বশুরবাড়ি’ কে ভালবেসে সদা হাস্য মুখে নিজের মজ্জায় নিয়ে চলতে হবে। সেখানে থাকবে গর্ব, কৃতজ্ঞতা, সেবার মনোভাব, ‘মেয়েরা মায়ের জাত’ এর প্রমাণ। একদিনের মাথায় সেই বাড়িটিকে ‘তোমাদের বাড়ি’ বলা  চলবে না, বলতে হবে ‘আমাদের বাড়ি’ সে যতই মনে না হোক। তাকে আবার এটাও শুনতে হবে ‘তোমাকে তো যথেষ্ট স্বাধীনতা দেওয়া হচ্ছে, এর থেকে বেশি আর কী  চাই?’ যেন স্বাধীনতা কারো দেওয়ার ওপরে নির্ভরশীল, যেন স্বাধীনতা লিঙ্গ নির্বিশেষে জন্মগত অধিকার নয়।

এ সমস্ত শুধুমাত্র পুরুষেরা করে, তা একেবারেই নয়। আমি বিভিন্ন লেখায় বার বার একটি কথা বলেছি, যত বেশি পুনরাবৃত্তিমূলক হোক না কেন, তবু বলব। যে এই সমস্ত অসাম্যের বা বলা ভাল পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতার ধারক এবং বাহক পুরুষ-নারী উভয়েই। যত না বেশি পুরুষদের আপত্তি দেখেছি, তার চেয়ে অনেক গুন বশি আপত্তি দেখেছি মহিলাদের – ওকে দিয়ে বাড়ির কাজ করাচ্ছে! কী সাংঘাতিক মেয়ে রে বাবা। কিংবা, ইস, ওকে সারাজীবন এক গ্লাস জল ভরেও খেতে হয়নি, অথচ এমন  মেয়ের পাল্লায় পড়ল, এখন সব করতে হচ্ছে। কিংবা, পুরো মেয়েলি, সব বাড়ির কাজ করতে পারে।

শুনুন, কেউ কিছু পারে এবং করতে চায়, সেটা স্বাভাবিক এবং প্রশংসনীয়। কেউ কিছু করতে পারেনা, সেটা লজ্জার। কেউ কিছু করতে চায়না, এবং চায় সব কিছু আরেকজন করে দিক, এটা তার জন্যে করুণার। যেসব কাজ মেয়েদের করতে দেখে অভ্যস্ত আমরা, আর ছেলেদের না করতে দেখে, সেগুলো কে মেয়েলি বলে হেয় করে নিজেদের একাংশকে এইভাবে অসম্মান করতে বিন্দুমাত্র গ্লানিটুকু না হয়ে থাকলে আপনি নীচতার পরিবাহক। এবং আপনার পরিশোধন আশু প্রয়োজন।

কিছুদিন আগে এ ধরণের কোনও এক প্রসঙ্গে আমি এবং আমার বন্ধু তথা সহকর্মী আরেকজন সহকর্মী কে যখন বলেছিলাম আপনার স্ত্রী কিছু বলেননা? উনি পরিত্রাণের হাসি হেসে বলেছিলেন   ‘আমি খুব জোর বেঁচে গেছি, আমার স্ত্রী আপনাদের মতো নয়’ এই মন্তব্যের অন্তর্নিহিত অর্থ  পড়তে পেরেছিলাম বটে। আমাদের মত সহজ, স্বাভাবিক প্রশ্ন গুলো না করে বিনা প্রশ্নে সমস্ত অসাম্যের অলিখিত নিয়মে অংশগ্রহণ করা একজন মহিলাই নিরাপদ এবং কাঙ্ক্ষিত। এভাবেই সংখ্যাগরিষ্ঠরা ‘ভারসাম্য’ বজায় রেখে চলেছেন ‘সাম্য’র দিকে বিন্দুমাত্র দৃকপাত না করে।  

একক কবিতা সন্ধ্যা



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...