বিতানের রবিবার ।। শীর্ষেন্দু ভট্টাচার্য

বিতানের রবিবার
শীর্ষেন্দু ভট্টাচার্য
 
আজ রবিবার। সকাল থেকেই বিতানের মন ছটফট করছে। আজকে সে খেলতেও যায়নি। আজ যে মায়ের সাথে পুজোর বাজার করতে যাওয়ার কথা। সারা বছর ধরে এই দিনটার অপেক্ষায় থাকে বিতান। কত কী ভেবে রাখে তার শেষ নেই। এবার তো চুপি চুপি অঙ্ক খাতার একটা পাতা ছিঁড়ে রীতিমতো লিস্ট বানিয়ে রেখেছে সে। জামা প্যান্ট নিয়ে কোনও টেনশন নেই। মা তো কিনবেই, মামাবাড়ি থেকে একটা, দুই মাসির বাড়ি থেকে দু'টো-- সব মিলিয়ে চারটে পাঁঁচটা বাঁধা। এবার একটা জুতো কেনার বায়না করেছে। বাবাকে বলে খুব একটা ভালো ফল হয়নি, উল্টে শুনতে হয়েছে, "এই তো দু'দিন আগেই একটা কিনে দেওয়া হলো"। এই হচ্ছে সমস্যা। বর্ষার জুতো আর পুজোর সময় পরার জন্য স্পোর্টস সু'র মধ্যে যে একটা জমিন- আশমান ফারাক আছে, বাবাকে সেটা বোঝাবে এমন সাধ্য তার নেই। এমনিতে বাবা খুবই ভালো। সারাদিন স্কুল আর নানান সামাজিক কাজকর্ম নিয়ে মেতে থাকেন। বিতানদের স্কুলেও কি একটা কমিটিতেও বাবা আছেন। ও বুকলিস্টে বাবার নাম দেখেছে। তবে রেগে গেলে বকেন, কিন্তু পারতপক্ষে মারধোর করেন না। পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোনোর পরেও কোনওদিন কত রোল হয়েছে জানতে চাননা, শুধু কিসে কত পেয়েছে জিজ্ঞেস করেন। আর ঘাড় নেড়ে বলেন, " উঁহু, ভূগোল আর অঙ্কে আরও বেশি পেতে হবে"। তাই মায়ের কাছেই বিতানের সব আবদার। বিতানের মাও একটা স্কুলের ম্যাডাম। খুব বড় নাম স্কুলটার। লিখতে গেলে খাতার ওপরের অংশটা ভরে যায়। বিতানের এবছরের লিস্টে অনেকগুলো বই আছে। বই দোকানের কাকু আবার সবগুলো রেখেছে কিনা কে জানে। অনিল ভৌমিকের লেখা ফ্রান্সিসের দুটো গল্প ওর পড়া। বাকি দুটো এবারে নেবে। 'মুক্তোর সমুদ্র' আর 'তুষারে গুপ্তধন'। 'রূপোর নদী' শুকতারায় ধারাবাহিক ভাবে প্রতি সংখ্যায় বেরিয়েছে তাই ওটা না'হলেও চলবে। ফ্রান্সিসের অ্যাডভেঞ্চার ওর হেভি লাগে। ফেলুদা-শঙ্কু মিলিয়ে খান চারেক আর কমিকস অন্তত দশটা নিতেই হবে। আগের বার কেনা কমিকসের মধ্যে তিনটে মিসিং। চাচা চৌধুরীর একটা আর টিনটিনের দুটো বইকে ঝেপে দিয়েছে। এটা নিশ্চিতভাবেই বাপ্পার কাজ। বই পড়তে নিয়ে ফেরত দেবার নামচর্চা করেনা। আর চাইলে বলে, "এমা, সেই যে সেদিন দিয়ে এলুম"। আগের বার মা কিন্তু একটা ক্রিকেট ব্যাটও কিনে দিয়েছিলো, সেটা বাড়তি পাওনা। ওর হিসেবের মধ্যে ছিলোনা। এবারেও কি ওরকম কিছু...যাক সে পরে ভাবা যাবে। মা'কে গিয়ে তাড়া লাগায় একবার। মা রান্না করছে। আজকেও স্কুল যাওয়ার মতো তাড়াতাড়ি ভাত খেয়ে তারপর বেরোবে। আজ মাংস হয়নি। ছ্যাঃ রবিবার দিনেও সেই মাছের কাঁটা বেছে বেছে খেতে হবে! মায়ের হাতেও লিস্ট থাকে। ও দেখেছে। কার কার জন্য কী কী নিতে হবে সব লেখা থাকে। আমাদের জন্য ছাড়াও কাকীমা,খুড়তুতো দিদিদের জন্য, মামাবাড়ির সবার জন্য, মাসিদের জন্য অনেক লম্বা লিস্ট। সেবারে ছোটদের জন্য জামা কেনার সময় ওদের দোকানের যে বাচ্চা ছেলেটা কাজ করে, সে ফ্যালফ্যাল করে দেখছিল। খুব রোগা টাইপের ছেলেটা। মা যে হঠাৎ একটা জামা ওর জন্যেও কিনবে, বিতান ভাবতেই পারেনি। কেনরে বাবা? ওর জামা তো ওর বাবা-মা কিনবে, আর তাছাড়া পড়াশোনা না করে ও ব্যাটা দোকানেই বা কাজ করে কেন সেটাও বিতানের মাথায় ঢোকেনি। ছেলেটা এমন হাঁদা, জামা পেয়ে আবার চোখের জল মুছছিল। অবাক ব্যাপার! ব্যাটা জামা পেয়েছিস, কোথায় আনন্দে লাফাবি, তা না,  এখন আবার কান্নাকাটি জুড়ে দিচ্ছে! জামা কাপড় কিনতে এই দোকানে এলেই বিতানের খুব ভালো লাগে। মা জামা কাপড় কেনার সময় এই কাকুটা সবার জন্য চা আনায়, আর বিতানের জন্য কোল্ডড্রিঙ্কস। মা বারণ করলেও আজকে ও শুনবে না। গলা ধরে গেলে বয়েই গেলো। কত দেরি হবে রে বাবা! কত জায়গায় যেতে হবে এত দেরি করলে হয়! ফিরতে যদি আবার আগের বারের মত দেরি হয়ে যায় তাহলে বিকেলের খেলাটাই মাটি। কালকেও ও ব্যাট পায়নি। ওরা মাটিতে এক-দুই-তিন-চার করে লিখে তার সোজাসুজি লম্বা দাঁড়ি টানে, আর সংখ্যাগুলো ব্যাট দিয়ে চেপে আড়াল করে লটারি করে। যার যেই নম্বর সেই মত ব্যাট পাবে। ওর ভাগ্যটাই খারাপ। পরপর দু'দিন। একদিন ছয়, একদিন সাত। প্রথম দিন বল হারিয়েই গেলো খুঁজেই পাওয়া গেলোনা আর কাল তিন নম্বরে বিল্টার ব্যাট ছিলো। ও ব্যাটা আউটই হলনা। তবে চিটিং করেছে। বিতানের বল ওর ব্যাটে লেগেছিল, রাজু কিপিং এ ক্যাচও ধরেছিল। ব্যাটা মানলোই না! ধুর! মা যে কেন এত দেরি করছে কে জানে। আর বেশি দেরি হলে তো...
এই! উঠে পড়ো! রবিবার সকালটা কি পুরো ঘুমিয়েই কাটাবে? কাল তখনই বলেছিলাম, বেশি রাত অবধি ল্যাপটপে মুখ গুঁজে পড়ে থেকোনা। বাজার করতে যাবে তো? ফ্রিজে কিন্তু একটাও সবজি নেই। আর মানা কে চুল কাটাতে নিয়ে যেতে হবে আজকে সে খেয়াল আছে? লীনার কথায় সম্বিৎ ফেরে বিতানের। এতক্ষণ তাহলে কি...  মাঝে মাঝে মন কেমন করা এরকমই স্বপ্ন কেন যে দুচোখের পাতায় নামে বিতানের কে জানে! ভুলেই যায় আজ দেড় বছর ধরে দুরারোগ্য ব্যাধিতে জর্জরিত তার মা বিছানা ছেড়ে উঠতেই পারেন না। সবই তো জানে সে, তবুও কেন...?                           

একক কবিতা সন্ধ্যা



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...