মার্চ ২০২০                                                  প্রচ্ছদ–ঋত্বিক ত্রিপাঠী    

প্রেমপত্র ।। সুকান্ত সিংহ

 

পূর্বা,
      আমাদের একদিন আসনবনিতে নেমে পড়ার কথা ছিল, মনে আছে? আমি পাহাড় ভালবাসতুম। একটু ধুসর পাহাড়। তুই জঙ্গল। আমার পছন্দ ছিল মণিকর্ণিকার ঘাট। তোর অজন্তা। আমি চিরকাল হেমেন্দ্রকুমার পড়েছি। তুই কাফকা। আমার প্রিয় বই আরণ্যক। তোর হার্বাট। ২১শে ফেব্রুয়ারির দিন তুই পাড়ার কচিকাঁচাদের নিয়ে একটা হুলুস্থুলু ফেলে দিতিস। আমি তাদের লজেন্স দিতে দিতেই দিন কাটিয়ে ফেলতুম।  ভাস্কর চক্রবর্তীর কবিতা দু'চোখে দেখতে পারতিস না। আমি ভাস্করের কবিতা তোকে জোর করে শোনাতুম। পাঞ্জাবির কলার নিয়ে আমার কোনো কালেই মাথাব্যথা ছিল না। তুই চিরকাল লোকের সামনেই কলার ঠিক করে দিতিস। আমি আজো খাবার আগে হাত ধুতে ভুলে যাই। তুই হাত না ধুয়ে এলে  কিছুই খেতে দিতিস না। পলাশ ছিল তোর প্রিয় ফুল। আমার জুঁই। প্রতিমা বড়ুয়া শুনতিস খুব। আমি একটু আধটু অমর পাল। ডুয়ার্সের জঙ্গলে হারিয়ে যেতে যেতে ঘুমিয়ে পড়তিস। আমি তখন আসনবনিতে নেমেছি। রবীন্দ্রনাথের অমল তোর ভাল লাগত, যে অমল রাজার চিঠির জন্য বসে থাকে। আমার ভাল লাগত কিশোরকে, মারের মুখেও যে রক্তকরবী নিয়ে আসে।

      পূর্বা, তুই এখন আর কারো চিঠির জন্যই হয়তো অপেক্ষা করিস না। আমিও আর মারের মুখের থেকে রক্তকরবী আনতে যাই না। শুনেছি তোর স্কুলে একটা রক্তকরবী গাছ লাগিয়েছিস। ফুলের ভারে সে নুয়ে নুয়ে পড়ে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা সেই ফুল তোকে মাঝে মাঝে তুলে এনে দেয়। তুই কখনো কখনো খোঁপায় গুঁজে রাখিস। শুনেছি। কথা ভেসে আসে। কথার কাজই এই, ভেসে আসা। আমার মতো ভেসে যাওয়ার স্বভাব তো তাদের নেই। এ ঘাট থেকে ও ঘাট ভাসতে ভাসতে যখন খুব ক্লান্তি আসে, ভাবি, নিজের একটা ঘাট থাকলে হোত। জানি, এমন কথা শুনলে তুই হেসেই কুটোপাটি খাবি। সেই আগের মতোই বলবি, বাবুর মুখে খই ফুটেছে।

      মা এখন ভাল আছেন। সেই ময়ূরের নক্সা তোলা আসনটা তুলে রেখেছেন। এখনো ভাবেন তুই কোনো দুপুরে মিছিল থেকে এসে বলবি, ভাত দাও, খুব খিদে পাচ্ছে। মা ওই আসনটাই পেতে ভাত দেবেন মনে মনে ভাবেন। মুখে কিছুই বলেন না। তিনি হয়তো বুঝে গেছেন, তোর বা আমার উপর তাঁর কোনো জোর নেই। তাঁর জোর শুধু ওই আসন পেতে ভাত বেড়ে দেওয়ার উপরেই।

      রঘু আসে এখনো। গান শুনিয়ে যায়। এই শীতে সে একটা কম্বল চেয়েছিল। দিয়েছি।  কম্বলটা নিয়ে মাথায় ঠেকিয়ে বলল, দিদিমণিরে অনেকদিন দেখি নাই। বললুম, দেখা হলে তোমার কথা নিশ্চয়ই বলব রঘু। সে বলল, দিদিমণিরে বলবেন একটা নতুন পদ বেঁধেচি, সুরটা তিনি ধরিয়ে দিলেই গাইতে পারি। তারপর সে চলে গেল।

       পূর্বা, মা আসন নিয়ে বসে থাকেন, রঘু পদ রচনা করে বসে থাকে, ২১শে ফেব্রুয়ারির সেই বাচ্চাগুলো অপেক্ষা করে কখন তুই ভোরবেলা তাদের নিয়ে গাইতে গাইতে বেরোবি আ মরি বাংলা ভাষা।

      আমাদের একদিন আসনবনিতে নেমে পড়ার কথা ছিল, পূর্বা।
                             ইতি--

 

একক কবিতা সন্ধ্যা



সহজ কবিতা সহজ নয় কঠিনও নয়



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...