হে প্রেম । কবি- কেশব মেট্যা । কণ্ঠ - কেশব মেট্যা । গ্রাফিক্স - বিপ্লব অধিকারী
এখন তো বর্ষার দিন
ভিজে গেলে দেবী দেবী লাগে
পিঠে তার রামধনু ছায়া
মনে মনে মল্লার জাগে...
হে প্রেম । কবি- কেশব মেট্যা । কণ্ঠ - কেশব মেট্যা । গ্রাফিক্স - বিপ্লব অধিকারী
এখন তো বর্ষার দিন
ভিজে গেলে দেবী দেবী লাগে
পিঠে তার রামধনু ছায়া
মনে মনে মল্লার জাগে...
আবৃত্তি - মুনিরা আখতার । কবিতা - বর্ষা । কবি - অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায় । গ্রাফিক্স - বিপ্লব অধিকারী । সম্পাদনা - কেশব মেট্যা
' হয়তো মেঘে-বৃষ্টিতে বা শিউলি গাছের তলে
আজানুকেশ ভিজিয়ে নিচ্ছ আকাশ-ছেঁচা জলে
কিন্তু তুমি নেই বাহিরে অন্তরে মেঘ করে--
ভারি ব্যাপক বৃষ্টি আমার বুকের মধ্যে ঝরে ! ’
প্রিয়তমাসু,
আমি বুকের ভেতর পাহাড় পুষেছিলাম সেই কবে, পাহাড়টার নাম দিয়েছিলাম বিষাদ; শীত গেছে অনেকদিন, শীত ঘুম ভাঙছে সব শীতল রক্তের, বাতাসে দখিন হাওয়ার আনাগোনা, তুমি আলমারিতে তুলে রাখছো সব শীতের পোশাক, আলমারি খুলতেই বেরিয়ে এসেছে একটা নদী, সেই নদীতে তুমি ভাসতে গেলে আমায় নিয়ে, ভাসতে ভাসতে সৃষ্টির কাছে পৌঁছে যাই যদি... বুকের কাছে পাহাড়টার উপস্থিতি টের পাই বেশ, হয়তো তার ভেতরেও ঝর্ণার জল টলটল করছে।
তোমার স্বাদ কোরকে তখন ভীষণ উদ্দামতা, পাগল তুমি আমায় গিলে নিতে চাইছো, ধরো তোমার জিভ সাপের জিভের মতো দু-ভাগ করা, হিসহিস শব্দ বেরোচ্ছে, তুমি জিভ ঢুকিয়ে দিচ্ছ আমার মুখের ভেতর দিয়ে, তারপর গলা পেরিয়ে,
বুক পেরিয়ে, পেটের ভেতর সব অন্ত্রের ভেতর দিয়ে তোমার জিভ এগিয়ে যাচ্ছে সৃষ্টির কাছে, তোমার জিভের আঘাতে বুকের পাহাড়টা ভেঙে গেছে তখন, আমার শরীর গুঁড়িয়ে, পায়ু দিয়ে বেরিয়ে আসছে পাহাড়টার বুকের ঝর্ণার জলের ধারা, তারা মিশে যাচ্ছে বাইরের নদীটার বুকে, আমার শরীর থেকে খুব্লে তুলছো মাটি, একা একাই মূর্তি গড়ছো একটা কিছুর, আমি, মাটি হয়ে যাওয়া আমি তাকিয়ে দেখছি সে মূর্তি আমারই রূপ পাচ্ছে একটু একটু করে। তারপর সেই মূর্তি নিয়ে ফিরে যাচ্ছ তুমি নিজের দেশ; আমি, জলে মিশে যাওয়া আমি তোমার মিলিয়ে যাওয়া দেখছি।
ঘরে ফিরে বিছানায় আদর করে বসিয়ে রেখেছো হয়তো, তোমার বুকের গভীরে হাত ঢুকিয়ে তুলে আনছ হয়তো প্রাচীন সুগন্ধি, ছড়িয়ে দিচ্ছ আমার মূর্তির শরীরে। তারপর এক কাপ চা হাতে নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছো, ডাক দিচ্ছ আমার নাম ধরে, মশারি সরিয়ে বেরিয়ে আসছি আমি, মূর্তি ভেঙে শরীর বেরিয়ে আসছে একটা, গুটি ভেঙে বেরিয়ে আসা প্রজাপতির মতো করে, চা খেয়ে উঠে আমি দেখছি তুমি শীতের পোশাক তুলে রাখছো আলমারিতে। বাতাসে এখন দখিন হাওয়ার শনশন আওয়াজ, শীত চলে গেলো অনেকদিন।
পূর্বা,
আমাদের একদিন আসনবনিতে নেমে পড়ার কথা ছিল, মনে আছে? আমি পাহাড় ভালবাসতুম। একটু ধুসর পাহাড়। তুই জঙ্গল। আমার পছন্দ ছিল মণিকর্ণিকার ঘাট। তোর অজন্তা। আমি চিরকাল হেমেন্দ্রকুমার পড়েছি। তুই কাফকা। আমার প্রিয় বই আরণ্যক। তোর হার্বাট। ২১শে ফেব্রুয়ারির দিন তুই পাড়ার কচিকাঁচাদের নিয়ে একটা হুলুস্থুলু ফেলে দিতিস। আমি তাদের লজেন্স দিতে দিতেই দিন কাটিয়ে ফেলতুম। ভাস্কর চক্রবর্তীর কবিতা দু'চোখে দেখতে পারতিস না। আমি ভাস্করের কবিতা তোকে জোর করে শোনাতুম। পাঞ্জাবির কলার নিয়ে আমার কোনো কালেই মাথাব্যথা ছিল না। তুই চিরকাল লোকের সামনেই কলার ঠিক করে দিতিস। আমি আজো খাবার আগে হাত ধুতে ভুলে যাই। তুই হাত না ধুয়ে এলে কিছুই খেতে দিতিস না। পলাশ ছিল তোর প্রিয় ফুল। আমার জুঁই। প্রতিমা বড়ুয়া শুনতিস খুব। আমি একটু আধটু অমর পাল। ডুয়ার্সের জঙ্গলে হারিয়ে যেতে যেতে ঘুমিয়ে পড়তিস। আমি তখন আসনবনিতে নেমেছি। রবীন্দ্রনাথের অমল তোর ভাল লাগত, যে অমল রাজার চিঠির জন্য বসে থাকে। আমার ভাল লাগত কিশোরকে, মারের মুখেও যে রক্তকরবী নিয়ে আসে।
পূর্বা, তুই এখন আর কারো চিঠির জন্যই হয়তো অপেক্ষা করিস না। আমিও আর মারের মুখের থেকে রক্তকরবী আনতে যাই না। শুনেছি তোর স্কুলে একটা রক্তকরবী গাছ লাগিয়েছিস। ফুলের ভারে সে নুয়ে নুয়ে পড়ে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা সেই ফুল তোকে মাঝে মাঝে তুলে এনে দেয়। তুই কখনো কখনো খোঁপায় গুঁজে রাখিস। শুনেছি। কথা ভেসে আসে। কথার কাজই এই, ভেসে আসা। আমার মতো ভেসে যাওয়ার স্বভাব তো তাদের নেই। এ ঘাট থেকে ও ঘাট ভাসতে ভাসতে যখন খুব ক্লান্তি আসে, ভাবি, নিজের একটা ঘাট থাকলে হোত। জানি, এমন কথা শুনলে তুই হেসেই কুটোপাটি খাবি। সেই আগের মতোই বলবি, বাবুর মুখে খই ফুটেছে।
মা এখন ভাল আছেন। সেই ময়ূরের নক্সা তোলা আসনটা তুলে রেখেছেন। এখনো ভাবেন তুই কোনো দুপুরে মিছিল থেকে এসে বলবি, ভাত দাও, খুব খিদে পাচ্ছে। মা ওই আসনটাই পেতে ভাত দেবেন মনে মনে ভাবেন। মুখে কিছুই বলেন না। তিনি হয়তো বুঝে গেছেন, তোর বা আমার উপর তাঁর কোনো জোর নেই। তাঁর জোর শুধু ওই আসন পেতে ভাত বেড়ে দেওয়ার উপরেই।
রঘু আসে এখনো। গান শুনিয়ে যায়। এই শীতে সে একটা কম্বল চেয়েছিল। দিয়েছি। কম্বলটা নিয়ে মাথায় ঠেকিয়ে বলল, দিদিমণিরে অনেকদিন দেখি নাই। বললুম, দেখা হলে তোমার কথা নিশ্চয়ই বলব রঘু। সে বলল, দিদিমণিরে বলবেন একটা নতুন পদ বেঁধেচি, সুরটা তিনি ধরিয়ে দিলেই গাইতে পারি। তারপর সে চলে গেল।
পূর্বা, মা আসন নিয়ে বসে থাকেন, রঘু পদ রচনা করে বসে থাকে, ২১শে ফেব্রুয়ারির সেই বাচ্চাগুলো অপেক্ষা করে কখন তুই ভোরবেলা তাদের নিয়ে গাইতে গাইতে বেরোবি আ মরি বাংলা ভাষা।
আমাদের একদিন আসনবনিতে নেমে পড়ার কথা ছিল, পূর্বা।
ইতি--
আমাদের কথা
আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...
কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...
ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...